তড়িৎপ্রবাহের তাপীয় ফল(Heating Effect of Current ) | মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান |


             (  জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর   )





    1. (i) তড়িৎপ্রবাহের তাপীয় ফল বলতে কী বোঝায়।(2)
    (ii) জুল তাপন বা জুল ক্রিয়া কাকে বলে?(1)
    (iii) তড়িৎপ্রবাহের ফলে উৎপন্ন তাপ সম্পর্কিত জুলের সূত্রগুলি বিবৃত করো। 
    অথবা, তড়িৎপ্রবাহের ফলে পরিবাহীতে উৎপন্ন তাপ কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর কীভাবে নির্ভর করে?
    (iv) জুলের সূত্রগুলির সাহায্যে CGS ও SI-তে, উৎপন্ন তাপের রাশিমালা নির্ণয় করো। (3)

    উত্তর

    (i) তড়িৎপ্রবাহের ভাপীয় ফল (Heating effect of current) : 

         যে-কোনো পরিবাহীর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হলে পরিবাহীর রোধ সেই প্রবাহকে বাধা দেয়। এই বাধা অতিক্রম করার জন্য তড়িৎ উৎস কিছু পরিমাণ কার্য করে। এই প্রক্রিয়ায় তড়িৎশক্তির একটি নির্দিষ্ট অংশ তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে পরিবাহীকে উত্তপ্ত করে। এই ঘটনাটিকে তড়িৎপ্রবাহের তাপীয় ফল বলা হয়।

    (ii) জুল ক্রিয়া (Joule effect) :

      স্কটিশ বিজ্ঞানী জেমস্ প্রেসকট জুল (1840-43 খ্রিস্টাব্দে) প্রথম তড়িৎপ্রবাহ ও তার ফলে উৎপন্ন তাপের মধ্যে সম্পর্ক পরীক্ষামূলকভাবে প্রতিষ্ঠা করেন। এ কারণেই তড়িৎপ্রবাহ চালনার ফলে পরিবাহীতে তাপ উৎপন্ন হওয়ার ঘটনাটিকে জুল তাপন (Joule heating) বা জুল ক্রিয়া বলা হয়।

    (iii) জুলের সূত্রাবলি (Joule's law) :

       ইংরেজ বিজ্ঞানী জেমস্ প্রেসকট জুল তড়িৎপ্রবাহের তাপীয় ফল সংক্রান্ত তিনটি সূত্র প্রকাশ করেন। 
             সূত্রগুলি হল -

    🔘 প্রথম সূত্র : 

                   পরিবাহীর রোধ (R) এবং তড়িৎপ্রবাহের সময় (t) অপরিবর্তিত থাকলে, পরিবাহীতে উৎপন্ন তাপ (H) তড়িৎপ্রবাহমাত্রার (I) বর্গের সমানুপাতিক হয়।
    অর্থাৎ, H ♾️  I²  [ যখন R ও t  স্থির ]

     🔘 দ্বিতীয় সূত্র : 

                    পরিবাহীর তড়িৎপ্রবাহমাত্রা (I) এবং
    তড়িৎপ্রবাহের সময় (t) অপরিবর্তিত থাকলে, পরিবাহীতে উৎপন্ন তাপ (H) পরিবাহীর রোধের (R) সমানুপাতিক হয়।
    অর্থাৎ, H ♾️ R [ যখন I  ও t স্থির ]

    🔘 তৃতীয় সূত্র : 

                    পরিবাহীর তড়িৎপ্রবাহমাত্রা (I) এবং
    পরিবাহীর রোধ (R) অপরিবর্তিত থাকলে, পরিবাহীতে উৎপন্ন তাপ (H) তড়িৎপ্রবাহের সময়ের (t) সমানুপাতিক হয়।
    অর্থাৎ, H ♾️ t  [ যখন I ও R স্থির ]

    সুতরাং, সূত্র তিনটিকে একত্রিত করলে পাওয়া যায়,  H ♾️ I² R t [ যখন I,R ও t পরিবর্তনশীল ]

    (iv) তড়িৎপ্রবাহের তাপীয় ফল সংক্রান্ত জুলের সূত্র তিনটিকে সমন্বয় করে কোনো পরিবাহীতে উৎপন্ন তাপের পরিমাণ পাওয়া যায়। কোনো পরিবাহীর প্রবাহমাত্রা I , রোধ R এবং তড়িৎপ্রবাহের সময় t  হলে, জুলের সূত্রানুযায়ী, পরিবাহীটিতে উৎপন্ন তাপ

           H ♾️ I²Rt 
    [যখন I, R এবং t প্রত্যেকেই পরিবর্তনশীল]
    বা, H = K I² R t [যেখানে, k = ধ্রুবক]
    যদি।-কে অ্যাম্পিয়ারে, R-কে ওহ্‌মে এবং t-কে সেকেন্ডে প্রকাশ করা হয়, তাহলে উপরের সমীকরণ থেকে লেখা যায়—
         H= I².R.t/J ...............(1)
    যেখানে, K = 1/J এবং J একটি ধ্রুবক। সমীকরণ (1) থেকে পাই 
        J = I².R.t ; এখন I = 1, R=1, t = 1 হলে 
        J = 1/H
      সুতরাং, একক রোধসম্পন্ন পরিবাহীর মধ্য দিয়ে একক সময় ধরে একক তড়িৎপ্রবাহমাত্রা পরিচালিত হলে পরিবাহীে যে পরিমাণ তাপ উৎপন্ন হয়, তার অনোন্যককেই তাপের যান্ত্রিক তুল্যাঙ্ক (Mechanical equivalent of heat) বা জুল তুল্যাঙ্ক (Joule equivalent) বলা হয়।

    [ অনুরূপ প্রশ্ন : তাপের যান্ত্রিক তুল্যাঙ্কের সংজ্ঞা দাও। *]

    🟣 CGS পদ্ধতিতে উৎপন্ন তাপ : CGS পদ্ধতিতে
    পরিবাহীতে উৎপন্ন তাপ H-কে ক্যালোরিতে প্রকাশ করা হয় এবং এক্ষেত্রে J = 4.2 J/cal। সুতরাং, 1 নং সমীকরণ থেকে লেখা যায়,
        H= I².R.t/4.2 cal
    বা, H = 0.24 I².R.t cal

    🟣 SI-তে উৎপন্ন তাপ : SI-তে, পরিবাহীতে উৎপন্ন তাপ H-কে জুল এককে প্রকাশ করা হয় এবং এক্ষেত্রে J = 1।
    সুতরাং, (1)নং সমীকরণ থেকে লেখা যায়— H=I².R.t জুল।


    [জোন রাখো : জে কার্য ও তাপের তুল্যতাজ্ঞাপক সমীকরণ : W = JH -এ J ধ্রুবকটি একটি রূপান্তর গুণকের ভূমিকা পালন করে।
    CGS পদ্ধতিতে তাপের একক ক্যালোরি এবং কার্যের একক আর্গ হলে J-এর মান 4.2 x 107 আর্গ/ক্যালোরি হয় এবং SI-তে তাপ ও কার্যের
    একক একই হওয়ায় J = 1 হয়।]

    [জেনে রাখো : তাপ ও যান্ত্রিক কার্যের পারস্পরিক সম্পর্ক বিষয়ক জুলের গবেষণার সূত্রেই তাপের প্রকৃতি বিষয়ক ক্যালোরিক মতবাদ বা তত্ত্বটি ভুল প্রমাণিত হয়। জুলের কার্য সূত্রে, শক্তি সংরক্ষণ নীতির ধারণার উদ্ভব হয়, যা পরবর্তীকালে তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্র রূপে পরিচিতি লাভ করে।]

    [জান রাখা : একাধিক রোধ যখন শ্রেণি সমবায়ে যুক্ত থাকে, তখন প্রতিটি রোধের মধ্য দিয়ে একই তড়িৎপ্রবাহমাত্রা যায়। অর্থাৎ, I = ধ্রুবক। তাই, রোধের শ্রেণি সমবায়ের ক্ষেত্রে উৎপন্ন তাপের পরিমাণ নির্ণয়ে H = 0.24 I²Rt  ক্যালোরি
     বা, H = I²Rt  জুল সম্পর্কটি ব্যবহার করাই
    সুবিধাজনক।]

    [জেনে রাখো : ফিলামেন্টের উপাদান হিসেবে টাংস্টেনের পরিবর্তে টাংস্টেন, ম্যাঙ্গানিজ ও লোহার একটি সংকর ধাতু উলফ্রেমাইট ব্যবহার
    করা যায়। বর্তমানে ট্যান্টালাম বা ওসরাম (অসমিয়াম ও উলফ্রামের ধাতুসংকর) ব্যবহার করে উচ্চ রোধবিশিষ্ট ফিলামেন্ট তৈরি করা হয়।]


    2. (i) দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত হয় এমন কয়েকটি যন্ত্রের নাম লেখো যাতে তড়িৎপ্রবাহের তাপীয় ফলের ব্যবহারিক প্রয়োগ ঘটানো হয়। ★★ [ME ] (2)
    (ii) এমন কয়েকটি যন্ত্রের নাম লেখো, যেখানে এই ক্রিয়া অবাঞ্ছিত। ★★(2)


    উত্তর. 

    (i) দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত যন্ত্র, যাতে জুল তাপন ক্রিয়ার ব্যাবহারিক প্রয়োগ ঘটানো হয় সেগুলি হল –বৈদ্যুতিক ইস্ত্রি, হিটার, বৈদ্যুতিক বাতি, ওয়েল্ডিং যন্ত্র ইত্যাদি।

    (ii) জুল তাপন ক্রিয়া অবাঞ্ছিত এবং তার উপস্থিতিতে শক্তির অপচয় ঘটে বৈদ্যুতিক মোটর, ডায়নামো, ট্রান্সফরমার ইত্যাদিতে।


    3. (i) ফিউজ তার কী? [ME 14, 12] 
    এর বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।[ME 15, 12, 08, 06, 03] (2+2)
    (ii) বৈদ্যুতিক লাইনে ফিউজ তার ব্যবহার করা হয় কেন? ★★★ (2) [ME 14, 08, 06, 03]


    উত্তর .

    (i) ফিউজ তার
          সাধারণত 75% সিসা (Pb) এবং 25% টিন (Sn) সহযোগে গঠিত ধাতু সংকর দিয়ে তৈরি, উচ্চ রোধ ও নিম্ন গলনাঙ্কযুক্ত এবং কম দৈর্ঘ্যের যে সরু তারটিকে চিনামাটির হোল্ডারের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক মেইন লাইনের লাইভ তারের সঙ্গে শ্রেণি বৈদ্যুতিক ফিউজ সমবায়ে যুক্ত করে তড়িৎবর্তনী সম্পূর্ণ করা হয়, সেই তারটিকে ফিউজ তার বলে।

    ★★ ফিউজ তারের বৈশিষ্ট্য :
               1. ফিউজ তার সিসা (75%) ও টিন (25%) সমন্বিত একটি সংকর ধাতু দিয়ে তৈরি করা হয়।
              2. ফিউজ তারের উপাদানের গলনাঙ্ক নিম্ন ও রোধাঙ্ক উচ্চমানের হয়।
             3. তড়িৎবর্তনীতে ফিউজ তার সর্বদাই লাইভ তারের সঙ্গে ও সংযুক্ত বৈদ্যুতিক যন্ত্রগুলির সঙ্গে শ্রেণি সমবায়ে যুক্ত থাকে।

    (ii)বৈদ্যুতিক লাইনে ফিউজ তার ব্যবহার করার কারণ: 

          ফিউজ তার তড়িৎবর্তনীতে একটি সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে। প্রতিটি ফিউজ তার যেমন একটি নির্দিষ্ট সর্বোচ্চ মাত্রার তড়িৎপ্রবাহ সহ্য করতে পারে, ঠিক তেমনই বৈদ্যুতিক লাইন এবং লাইনের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন তড়িৎ যন্ত্রগুলিও একটি নির্দিষ্ট সর্বোচ্চ সীমার তড়িৎপ্রবাহ সহ্য করতে পারে। অবশ্য ফিউজ তারের তড়িৎপ্রবাহমাত্রার সর্বোচ্চ সহনসীমা, বৈদ্যুতিক লাইন ও লাইনের সঙ্গে যুক্ত তড়িৎ যন্ত্রগুলির সহনসীমা অপেক্ষা অনেক কম হয়। এর ফলে, শর্ট-সার্কিট বা ওভার-লোডিংজনিত কারণে বৈদ্যুতিক লাইনে তড়িৎপ্রবাহমাত্রা হঠাৎ বেড়ে গিয়ে লাইনের সর্বোচ্চ সহনশীল মাত্রায় পৌঁছোবার আগেই কম গলনাঙ্কের ফিউজ তারটি উত্তপ্ত হয়ে গলে যায়। ফলে, তড়িৎবর্তনী ছিন্ন হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে বর্তনীতে তড়িৎপ্রবাহ বন্ধ হয়। তাই, বৈদ্যুতিক লাইন এবং বিভিন্ন বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিগুলি নষ্ট হয় না এবং বাড়িতে আগুন লাগার মতো দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।


    4. একটি ধাতব তারের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ হচ্ছে। জুলের সূত্রানুযায়ী যে তাপ উৎপন্ন হয়, তার পরিমাণ কীভাবে পরিবর্তিত হবে, যখন – 
    (i) তড়িৎপ্রবাহ তিনগুণ করা হয় এবং রোধ ও সময় স্থির থাকে। 
    (ii) তড়িৎ প্রবাহের সময় স্থির রেখে পরিবাহীর প্রবাহমাত্রা অর্ধেক এবং রোধ দ্বিগুণ করা হয়। (New Alipore Multipurpose) 
    (iii) তারের দু-প্রান্তের বিভবপ্রভেদ দ্বিগুণ
    করা হয় যখন রোধ এবং সময় স্থির থাকে। (2x3) ★★

    উত্তর. 

     (i) তড়িৎপ্রবাহের তাপীয় ফল সংক্রান্ত জুলের সূত্র অনুযায়ী, পরিবাহীর রোধ (R) এবং তড়িৎপ্রবাহের সময় (t) স্থির থাকলে কোনো পরিবাহীতে উৎপন্ন তাপ (H) প্রবাহমাত্রার (I) বর্গের সমানুপাতিক হয়। অর্থাৎ, H ♾️ I² [ যখন R ও t স্থির ]। সুতরাং,তড়িৎপ্রবাহমাত্রা তিনগুণ হলে উৎপন্ন তাপ পূর্বের তুলনায় 3² বা 9 গুণ হবে।

    (ii) মনে করি, প্রাথমিক রোধ = R1 প্রবাহমাত্রা =I1
    সময় = t, অন্তিম রোধ = R2 অন্তিম প্রবাহমাত্রা = I2 এবং সময় = t.
    অর্থাৎ, পরিবাহীতে উৎপন্ন তাপ পূর্বের মানের অর্ধেক হয়ে যাবে।

    (iii) R রোধযুক্ত কোনো পরিবাহীর মধ্য দিয়ে t সেকেন্ডে তড়িৎপ্রবাহমাত্রা I হলে, যদি পরিবাহীতে উৎপন্ন তাপ H হয়, তাহলে, H= V²t/JR
    [যেখানে, V = তারের দুপ্রান্তের বিভবপ্রভেদ]
    অর্থাৎ, H ♾️ V² [যখন R ও t স্থির]
    স্পষ্টত, বিভবপ্রভেদ দ্বিগুণ করা হলে, উৎপন্ন তাপের পরিমাণ পূর্বের তুলনায় 2² বা 4 গুণ হবে।


    5. (i) একই প্রকার দুটি তারের মধ্য দিয়ে একই তড়িৎপ্রবাহ যথাক্রমে 1 min এবং 5 min ধরে পাঠানো হল। দ্বিতীয় তারে উৎপন্ন তাপ প্রথম তারে উৎপন্ন তাপের কতগুণ? (2)
    (ii) সমান ব্যাসবিশিষ্ট দুটি তামার পরিবাহী তারের মধ্যে একটি অপরটির চেয়ে লম্বা। তার দুটির মধ্যে একই সময় ধরে একই প্রবাহমাত্রার তড়িৎপ্রবাহ চালনা করলে, কোন্ তারটিতে বেশি পরিমাণ তাপ উৎপন্ন হবে ও কেন? (2)


    উত্তর.

    (i) জুলের সূত্রানুয়ায়ী, তড়িৎপ্রবাহমাত্রা এবং পরিবাহীর রোধ অপরিবর্তিত থাকলে পরিবাহীতে উৎপন্ন তাপ তড়িৎপ্রবাহের সময়ের সমানুপাতিক হয়। যেহেতু, Hact(R, Jধ্রুবক)। প্রশ্নানুযায়ী,
    একই প্রকার দুটি তারের মধ্যে দিয়ে একই প্রবাহমাত্রা যথাক্রমে 1 min ও 5min ধরে পাঠানো হচ্ছে। সুতরাং, দ্বিতীয় তারে তড়িৎপ্রবাহের সময় প্রথম তারে তড়িৎপ্রবাহের সময় অপেক্ষা 5 গুণ বেশি। অতএব, দ্বিতীয় তারে উৎপন্ন তাপ প্রথম তারে উৎপন্ন তাপের 
    5 গুণ বেশি হবে।

    (ii) আমরা জানি, যে-কোনো পরিবাহীর প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল এবং উপাদান অপরিবর্তিত থাকলে ওই পরিবাহীর রোধ ও দৈর্ঘ্য
    পরস্পরের সমানুপাতিক হয়। অর্থাৎ, R ♾️ L ।
    সুতরাং, এক্ষেত্রে লম্বা তামার তারের রোধ ছোটো তামার তারের রোধ অপেক্ষা বেশি। আবার জুলের সূত্র অনুযায়ী, প্রবাহমাত্রা এবং প্রবাহের সময় স্থির থাকলে পরিবাহীতে উৎপন্ন তাপ (H), পরিবাহীর রোধের (R) সমানুপাতিক। অর্থাৎ, H ♾️ R ।
    যেহেতু, একই প্রবাহমাত্রা একই সময় ধরে উভয় তারে চালনা করা হচ্ছে; তাই, লম্বা তারটির রোধ বেশি হওয়ায় লম্বা তারটিতে বেশি তাপ উৎপন্ন হবে।

    [অনুরূপ প্রশ্ন : সমান দৈর্ঘ্যের একটি মোটা ও একটি সরু তামার তারের মধ্য দিয়ে একই সময় ধরে একই প্রবাহমাত্রা পাঠানো হলে—কোন তারটি বেশি উত্তপ্ত হবে ব্যাখ্যাসহ লেখো।]


    6. একটি তারের মধ্যে তড়িৎকোশের সাহায্যে তড়িৎপ্রবাহ চালনা করা হল। কিছুক্ষণ পরে তারটিকে উত্তপ্ত হতে দেখা গেল এবং তারের মধ্যে তড়িৎপ্রবাহ সামান্য হ্রাস পেল। এই ঘটনার ব্যাখ্যা দাও। ★★ (2)


    উত্তর . 

             পরিবাহী তারের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ হলে তড়িৎপ্রবাহের তাপীয় ফলের দরুন পরিবাহী তারে তাপ উৎপন্ন হয়। এজন্য কিছু সময়ের মধ্যেই পরিবাহী তারটিকে ক্রমশ উত্তপ্ত হতে দেখা যায়। আবার আমরা জানি, ধাতব পরিবাহীর উষ্ণতা বৃদ্ধি পেলে পরিবাহীর রোধও বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ, উয়তা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পরিবাহী তারের তড়িৎ পরিবাহিতাও ক্রমশ কমে যায়। তাই, শুরুতে অপেক্ষাকৃত শীতল অবস্থায় পরিবাহী তারের মধ্য দিয়ে যে পরিমাণ তড়িৎপ্রবাহমাত্রা যায় কিছুক্ষণ পরে তারের উয়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রবাহমাত্রা তার তুলনায় সামান্য কমে যায়।


    7. বায়ুশূন্য অবস্থার পরিবর্তে ইলেকট্রিক বাল্‌বের ভিতরে অল্প চাপে নিষ্ক্রিয় গ্যাস ভরতি করা থাকে কেন? ★ (3)


    উত্তর

    ইলেকট্রিক বালবের মধ্যেকার উচ্চ রোধবিশিষ্ট ফিলামেন্ট তড়িৎপ্রবাহের ফলে অত্যন্ত উত্তপ্ত হয়ে উচ্চ উয়তা লাভ করে এবং ভাস্বর হয়ে আলো বিকিরণ করে। বালবের ভিতরের অংশ বায়ুশূন্য অবস্থায় থাকলে উত্তপ্ত ফিলামেন্ট অপেক্ষাকৃত দ্রুত গতিতে বাষ্পীভূত হয়। এর ফলে ফিলামেন্ট দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকে এবং শেষে কেটে যায়। এ ছাড়া, ফিলামেন্টের বাষ্পীভূত কণা বালবের কাচের ভিতরের গায়ে কালো আস্তরণ সৃষ্টি করে, যার ফলে,আলোর উজ্জ্বলতাও কমে যায়। কিন্তু বাল্‌বের ভিতরে নিম্নচাপে সামান্য পরিমাণ কোনো নিষ্ক্রিয় গ্যাস প্রবেশ করানো থাকলে ফিলামেন্টের বাষ্পীভবন অনেক কম হয়। ফলে, বাল্বটি যেমন
    দীর্ঘদিন কর্মক্ষম থাকে, তেমনি তার উজ্জ্বলতাও হ্রাস পায় না।
             এজন্য বায়ুশূন্য অবস্থায় রাখার পরিবর্তে ইলেকট্রিক বাল্‌বের ভিতরে নিম্নচাপে সামান্য পরিমাণ নিষ্ক্রিয় গ্যাস রাখা হয়।

    [বিশেষ দ্রষ্টব্য : কোনো বৈদ্যুতিক বাল্ব বায়ুপূর্ণ রাখলে, ফিলামেন্টটি উচ্চ উন্নতায় বায়ুর অক্সিজেন দ্বারা জারিত হয়ে ধাতব অক্সাইড উৎপন্ন করে। ফলে, ফিলামেন্টটি দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ার জন্য বাল্‌বের কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়।]



    8. বৈদ্যুতিক হিটারে নাইক্রোম তার ব্যবহার করা হয় কেন? ★★★ [ME ]


    উত্তর. 

       নাইক্লোম হল নিকেল, ক্রোমিয়াম এবং লোহার সংকর ধাতু; যা বৈদ্যুতিক হিটারে ব্যবহার করা হয়। 

              ব্যবহারের কারণ—

    (i) উপাদান ধাতুগুলির তুলনায় নাইক্রোমের রোধাঙ্ক খুব বেশি, ফলে জুলের সূত্রানুযায়ী, তড়িৎপ্রবাহের ফলে তারটিতে বেশি তাপ উৎপন্ন হয়।
    (ii) নাইক্রোম তারের গলনাঙ্ক খুব বেশি। ফলে, উচ্চ উন্নতায় তারটি কঠিন অবস্থায় থাকে, গলে যায় না। ও উচ্চ উন্নতায় লোহিততপ্ত নাইক্রোম তার বায়ুর সংস্পর্শে থাকলেও বায়ুর অক্সিজেন দ্বারা জারিত হয় না। ফলে, এর রাসায়নিক পরিবর্তনজনিত ক্ষয় কম হয়। এই জন্য তারটিকে অনেকদিন ধরে ব্যবহার করা যায়।

    [অনুরূপ প্রশ্ন : ফিউজ তার তৈরিতে তামা ব্যবহার না করে সংকর ধাতু ব্যবহার করা হয় কেন?]


    9. 5 অ্যাম্পিয়ার ফিউজ তার বলতে কী বোঝায় ? **
    (2)

    উত্তর.

         5 অ্যাম্পিয়ার ফিউজ তার বলতে বোঝায় যে, সংশ্লিষ্ট ফিউজ তারটির মধ্য দিয়ে 5 A অপেক্ষা বেশি মানের প্রবাহমাত্রা গেলেই সেটি গলে গিয়ে বর্তনীকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। অর্থাৎ, ওই ফিউজের মধ্য দিয়ে নিরাপদে সর্বোচ্চ 5 A প্রবাহমাত্রা পাঠানো সম্ভব।


    10. শর্ট-সার্কিট বা হ্রস্বপথ কীভাবে ঘটে থাকে? এর ফলে বর্তনীতে কী ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে? (2+1)


    উত্তর. 
         কোনো কারণে তড়িৎবর্তনীতে দুটি তারের (ac বর্তনীতে লাইভ ও নিউট্রাল তার এবং dc-এর ক্ষেত্রে পজিটিভ ও নেগেটিভ তার) মধ্যে সরাসরি সংযোগ ঘটলে তড়িৎপ্রবাহ সংক্ষিপ্ত পথে বর্তনীর দুই অংশের মধ্যে বা এক মেরু থেকে অন্য মেরুতে যায়। ফলে, সমগ্র বর্তনীর রোধ অনেক কমে যায় এবং প্রবাহমাত্রা অস্বাভাবিক পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। এই ঘটনাকে শর্ট-সার্কিট বা হ্রস্বপথ বলা হয়। 

           🟣 শর্ট-সার্কিটের ফলে সরবরাহ লাইনে প্রবাহমাত্রার পরিমাণ অনেক গুণ বেড়ে যায়। এর ফলে বর্তনীতে যে বিপুল তাপ উৎপন্ন হয়, তার প্রভাবে সরবরাহ লাইনে আগুন ধরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বর্তনীতে সংযুক্ত দামি বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।




    Please visit again this Blog updated shortly 






    No comments

    ALL ABTA TEST PAPER 2023-24 PAGES SOLUTIONS at free of cost.

    MADHYAMIK ABTA 24 LIFE SCIENCE PAGE 141 | MADHYAMIK ABTA TEST PAPER SOLUTION 24 |

                            MADHYAMIK                 ABTA TEST PAPER 23-24                LIFE SCIENCE PAGE 141                          SOLUTION 

    Powered by Blogger.