মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান অভিযোজনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রচনাধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর (LAQ)

রচনাধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর (LAQ)


    1. উটের অতিরিক্ত জলক্ষয় সহন ক্ষমতার সঙ্গে এদের লোহিত রক্তকণিকার (RBC) বিশেষ চরিত্রটি কীভাবে সম্পর্কযুক্ত?
    খাদ্যসংগ্রহ ও রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে শিম্পাঞ্জিরা যেভাবে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সমস্যা সমাধান করে তার উদাহরণ দাও।
    [2+3=5] [M.P. 18]

    ANS উটের অতিরিক্ত জলক্ষয় সহন ক্ষমতার সঙ্গে এদের লোহিত রক্তকণিকা (RBC) বিশেষ চরিত্রটি নিম্নলিখিতভাবে সম্পর্কযুক্ত—

    (i) দীর্ঘদিন জল পান না করার পর অধিক জলপানে RBC-র জলস্ফীতির ফলে ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে কিন্তু উটের ক্ষেত্রে RBC-এর প্রাথমিক আকৃতি প্রায় 240% পর্যন্ত প্রসারিত হতে পারে।

    (ii) এদের RBC ক্ষুদ্র ও ডিম্বাকার হওয়ায় ঘন রক্তস্রোতের মধ্যে সরু জালক দিয়ে সহজে প্রবাহিত হতে পারে।

    🔺️ শিম্পাঞ্জির সমস্যা সমাধান : 

    আফ্রিকা মহাদেশের ঘন অরণ্যে শিম্পাঞ্জিরা বসবাস করে। এদের বৈজ্ঞানিক নাম প্যান ট্রোগ্লোডাইস (Pan troglodytes)। শিম্পাঞ্জির দেহের আকৃতি ও প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের দেহের আকৃতির কিছুটা সাদৃশ্য আছে। শিম্পাঞ্জির হাত বেশ লম্বা ও সরু। পায়ের পাতা লম্বা ধরনের। শিম্পাঞ্জি গাছে চড়তে এবং গাছের শাখাপ্রশাখার ওপর দিয়ে চলাফেরা করতে খুবই পারদর্শী। এরা গাছের ডালে বাসা তৈরি করে রাত্রিবাস করে। এদের প্রিয় খাদ্য নানারকম ফলমূল, বাদাম, শাক-সবজি, উই

    পোকা, ইঁদুর, ছোটো ছোটো পাখি ইত্যাদি।

    শিম্পাঞ্জিদের মধ্যে বিভিন্ন আচরণ লক্ষ করা যায়। যেমন—

     (i) এরা উইঢিবির সন্ধান পেলে গাছের শাখা দিয়ে একটি লাঠির মতো দণ্ড তৈরি করে নেয়। এই দণ্ডের ছুঁচালো প্রান্তটিকে উই-এর ঢিবির

    মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়। উইপোকাগুলি তখন লাঠি বেয়ে সারিবদ্ধভাবে বাইরে বেরিয়ে আসে। শিম্পাঞ্জি তখন মহা আনন্দে তার ভোজ সারে।

    (ii) এরা শক্ত কাঠ বা পাথরের টুকরোকে ‘হাতুড়ি ও নেহাই’-ব্যবহার করে বাদামের খোসা ছাড়ায়।

    (iii) শিম্পাঞ্জিরা কোনো পরজীবী দ্বারা আক্রান্ত হলে নিজেরাই বিশেষ ভেষজ উদ্ভিদ খুঁজে এনে ভক্ষণ করে, ফলে পরজীবীদের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পায়।

    2.  রুই মাছের জলজ অভিযোজনে পটকার ভূমিকা কী কী?[M.P. 18]

    ANS.

    ➡️রুইমাছের জলজ অভিযোজনে পটকার ভূমিকা : 

    রুই মাছের পটকা দুই প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট যথা— অগ্র প্রকোষ্ঠ এবং পশ্চাদ প্রকোষ্ঠ, পটকা মাছের আপেক্ষিক গুরুত্ব কমিয়ে ও বাড়িয়ে মাছকে জলের ওপরে ভাসতে এবং জলের নীচে ডুবতে সাহায্য করে।

    পটকার অগ্রপ্রকোষ্ঠে অবস্থিত রেডগ্রন্থি (red gland) গ্যাস সৃষ্টি করে এবং পশ্চাৎ প্রকোষ্ঠ অবস্থিত রেটিয়া মিরাবিলিয়া (retia mirabilia) নামক বিশেষ রক্তজালক গ্যাস শোষণ করে। রেডগ্রন্থি থেকে গ্যাস নির্গত হলে অগ্র প্রকোষ্ঠ ফুলে ওঠে, তখন উভয় প্রকোষ্ঠের মাঝখানের ভালভ্ (Valve) বন্ধ থাকে। ফলে মাছ জলে ভেসে ওঠে। আবার ভালভ্ খুলে গেলে গ্যাস পশ্চাৎ প্রকোষ্ঠে এসে রক্তজালক দিয়ে শোষিত হয়, তখন পটকা চুপসে যায় এবং মাছ পুনরায় জলের নীচে নেমে যায়।

    3. একটি মৌচাকে কোনো শ্রমিক মৌমাছি অন্য শ্রমিক মৌমাছিদের কীভাবে খাদ্য উৎসের সন্ধান ও অবস্থান জানায় ?[M.P.'17]

    ANS.

    🟣 খাদ্যউৎসের সন্ধান ও অবস্থান :

    > মৌমাছির বার্তা আদানপ্রদান ঃ 

    শ্রমিক মৌমাছিরা যাদের ফোরেজার বা স্কাউট বলে তারা খাবারের সন্ধানে দূর-দূরান্তে উড়ে বেড়ায়। খাবারের খোঁজ পেলে মৌচাকে ফিরে এসে বিশেষ ধরনের নৃত্য পরিবেশন করে। নৃত্যের মাধ্যমে সঙ্গীদের ফুলের অবস্থান ও দূরত্ব বোঝায়, একে মৌ নৃত্য (Bee Dance) বা মৌ ভাষা বলে। এই নৃত্যের মহড়া দেখতে অনেকটা ইংরেজি '৪' অক্ষরের মতো দেখায়। এরকম নৃত্যকে ওয়াগল নৃত্য (waggle dance) বলে। এই সময় তাদের উদরও আন্দোলিত হয়। মৌমাছিটি কীভাবে নাচছে এবং কতক্ষণ ধরে নাচছে তার ওপর ভিত্তি করে অন্যান্য মৌমাছিরা মৌচাক ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে এবং দ্রুত খাবারের উৎস স্থানে পৌঁছে যায়।

    > মৌমাছির নৃত্য :

    ➡️ চক্রাকার নৃত্য : খাদ্যের উৎস 100 মিটারের মধ্যে হলে এরা চক্রাকার নৃত্য করে।

    ➡️ ওয়াগটেল নৃত্য বা ওয়াগল নৃত্য :

    (a) খাদ্যের উৎস 100 মিটারের বেশি হলে এরা ইংরেজি '৪'-এর মতো নৃত্য করে।

    (b) এই নৃত্যের অভিমুখ যদি উর্ধ্বমুখী হয় তাহলে বুঝতে হবে খাদ্যের অবস্থান সূর্যের দিকে।

    (c) যদি নৃত্যের অভিমুখ নীচের দিক করে হয় তবে বুঝতে হবে খাদ্যের অবস্থান সূর্যের বিপরীত দিকে।

    (d) যদি এরা বামদিকে 60° কোণ করে নৃত্য করে তাহলে বুঝতে হবে চাকের বাম দিকে 60° কোণে খাদ্য অবস্থিত।

    (e) আবার যদি এরা ডানদিকে 120° কোণ করে তাহলে বুঝতে হবে চাকের ডানদিকে 120° কোণে খাদ্য বর্তমান।

    4. ক্যাকটাসের বাষ্পমোচন হ্রাসের জন্য কী কী অভিযোজন বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায় ?

    ANS.

     সংজ্ঞা : বাষ্পমোচন হ্রাসের জন্য ক্যাকটাসের অভিযোজন :

    ক্যাকটাস সাধারণত মরুভূমির শুষ্ক ও বালুকাময় পরিবেশে জন্মায়, তাই এদের জাঙ্গল উদ্ভিদ বা জেরোফাইট (xerophyte) বলে। ঊষর পরিবেশে বসবাসকারী ক্যাকটাসের বাষ্পমোচন হ্রাসের জন্য নিম্নলিখিত অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য

    পরিলক্ষিত হয়—

    (i) বাষ্পমোচন হ্রাসের জন্য ক্যাকটাসের পাতাগুলি কাঁটায় (পত্রকন্টক) রূপান্তরিত হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্যাকটাসের পাতা থাকলেও তা ক্ষুদ্রাকার এবং সংখ্যায় কম হয়।

    (ii) ক্যাকটাসের পাতাগুলি পুরু কিউটিকল ও মোমজাতীয় আবরণে আবৃত থাকে।

    (iii) বাষ্পমোচন রোধ করার জন্য পত্ররন্ধ্রের সংখ্যা কম হয় এবং পত্ররন্সগুলি পাতার নিম্নত্বকের গভীরে অবস্থান করে।

    (iv) বাষ্পমোচন রোধ করার জন্য ক্যাকটাসের কাণ্ডের ত্বক পুরু কিউটিকল যুক্ত এবং মোমজাতীয় আবরণ দিয়ে আবৃত থাকে।

    (v) কাণ্ডের কোশে মিউসিলেজ জাতীয় পদার্থ থাকায় কাণ্ডের জলধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

    [🔆🔆ক্যাকটাসের কাণ্ড স্থূল, চ্যাপ্টা, রসালো এবং সবুজ। জল সংরক্ষণ ও সালোকসংশ্লেষের জন্য এরূপ অভিযোজন হয়েছে। ক্যাকটাসের এরকম কাণ্ডকে পর্ণকাণ্ড বা ফাইলোক্যাড (phyloclade) বলে।]


    5. সুন্দরী উদ্ভিদের লবণ সহনের অভিযোজনগুলি উল্লেখ করো। [5]

    ANS. সুন্দরী গাছ সুন্দরবন অঞ্চলের ভিজে, কর্দমাক্ত এবং লবণাক্ত মাটিতে জন্মায়। এই কারণে এদের লম্বণাম্বু উদ্ভিদ বা হ্যালোফাইট (halophyte) বলে।

    ➡️ শ্বাসমূল : সুন্দরী গাছের মূল মাটির গভীরে প্রবেশ করে না, মাটির অল্প নীচে বিস্তৃত থাকে। সুন্দরবনের লবণাক্ত মাটিতে অক্সিজেন সরবরাহ কম হওয়ার জন্য কিছু শাখা-প্রশাখা মূল অভিকর্ষের বিপরীতে মাটির উপরে উঠে এসে শ্বাসমূল বা নিউম্যাটোফোর (pneumatophore) গঠন করেছে। এই মূলে অসংখ্য শ্বাসরন্জ থাকে। এই রন্ধ্রের সাহায্যে গাছ বায়ু থেকে অক্সিজেন

    শোষণ করে।

    ➡️অতিরিক্ত লবণ মোচন ঃ 

    (i) সুন্দরী গাছ মূল দ্বারা লবণাক্ত জল পরিসুত

    করে এবং অতিরিক্ত লবণ ত্যাগ করে। 

    (ii) সুন্দরী গাছের পাতায় অবস্থিত

    লবণ গ্রন্থির মাধ্যমে জলের সঙ্গে গৃহীত অতিরিক্ত লবণ ত্যাগ করে,

    (iii) সুন্দরী গাছ কিছু পরিমাণ অতিরিক্ত লবণ পাতা ও বাকলে জমা করে রাখে এবং পাতা ও বাকল মোচনের মাধ্যমে লবণ ত্যাগ করে।

    [🔆🔆ঠেসমূল : সুন্দরী গাছ নরম মাটিতে জন্মায়, তাই গাছগুলিকে খাড়াভাবে ধরে রাখার জন্য এদের কাণ্ডের গোড়া থেকে বহু ঠেসমূল (stilt root) নির্গত হয়েছে।]


    6. পায়রার উড্ডয়নে বায়ুথলির ভূমিকা উল্লেখ করো এবং পায়রার কয়েকটি অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো। [3+2=5]

    ANS. 

    🟣 পায়রার বায়ুথলি :

    পায়রা পক্ষী শ্রেণির অন্তর্গত খেচর প্রাণী।

    বায়ুতে ওড়ার জন্য এদের বিভিন্ন অভিযোজন কৌশল লক্ষ করা যায়। পায়রার একটি উল্লেখযোগ্য অভিযোজন বৈশিষ্ট্য হল পায়রার বায়ুথলি (Airsacs of pigeon)। পায়রার ফুসফুসের সঙ্গে 9 টি বায়ুথলি বা এয়ার

    স্যাক যুক্ত থাকে। বায়ুথলিগুলি বায়ুপূর্ণ থাকায় পায়রার দেহকে হালকা করে এবং উড্ডয়নকালে অক্সিজেন সরবরাহ করে। এই কারণে পায়রা সহজে ক্লান্ত হয় না। পায়রার বায়ুথলি দুটি পৃথক অংশ বিভক্ত, কডাল এবং ক্লেনিয়াল। কডাল অংশটি অ্যাবডোমিনাল এবং কড়াল থোরাসিক বায়ুথলি দ্বারা গঠিত, অনুরূপে ক্রেনিয়াল অংশটি সারভাইক্যাল, ক্ল্যাভিকুলার এবং ক্রেনিয়াল থোরাসিক বায়ুথলি দ্বারা গঠিত। এই ধরনের গঠনবিন্যাস ভূমিস্থ মাধ্যাকর্ষণ চাপ হ্রাস করে উড়তে সহায়তা করে।

    🟣 পায়রার কয়েকটি অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য :

    (i) এদের বক্ষে উড্ডয়ন পেশি উপস্থিত, যা ডানা দুটিকে পর্যায়ক্রমে অবিরাম ওঠা-নামা করায়।

    (ii) পায়রার অগ্রপদ ডানায় রূপান্তরিত।

    (iii) এদের চোখে পেকটিন নামক অঙ্গ দূর থেকে শস্যদানা দেখতে সাহায্য করে।

    (iv) পায়রার দেহকে হালকা করার জন্য চোয়ালে দাঁত থাকে না, পৌষ্টিকতন্ত্রে পাকস্থলী ও পিত্তাশয় থাকে না, রেচনতন্ত্রে মূত্রাশয় থাকে না, জননতন্ত্রে একটিমাত্র ডিম্বাশয় ও ডিম্বনালি থাকে।

    (v) পায়রার সারা দেহ পালকে ঢাকা থাকে।


    7. উটের অতিরিক্ত জলক্ষয় সহনের অভিযোজনগুলি উল্লেখ করো। উটের লোহিত রক্তকণিকার বৈশিষ্ট্য লেখো। [3+2=5]
    [Bethune Collegiate School, Patha Bhavan]

    ANS . 

    🟣 উটের জল ক্ষয় সহনের অভিযোজন : 

    উট মরুভূমির প্রাণী। এখানে তপ্ত বালুকাময় পরিবেশে জলের প্রচণ্ড অভাব। দেহে জল ক্ষয় রোধ করার জন্য যে সকল অভিযোজন বৈশিষ্ট্য দেখা যায় তা হল—

    (i) এদের দেহত্বক থেকে বাষ্পীভবন প্রতিরোধ করার জন্য চামড়া খুব পুরু এবং রোমযুক্ত।

    (ii) নিশ্বাসের সঙ্গে জলীয় বাষ্প যাতে বেরিয়ে না যায় সেই কারণে উ নিশ্বাসকে নাসাপথে ঠান্ডা করে ত্যাগ করে। ফলে নাসাপথে জল ঘনীভূত হয় এবং নাসাপথের কোশগুলি জল শোষণ করে নেয়।

    (iii) এরা মলমূত্রের সঙ্গে জল খুব কম ত্যাগ করে। এরা অর্ধকঠিন মূত্র ত্যাগ করে এবং ইউরিয়ার পরিবর্তে ইউরিক অ্যাসিড ত্যাগ করে। ফলে মূত্রে জলের অপচয় কম হয়। উট শুষ্ক বিষ্ঠা ত্যাগ করার ফলে জলের অপচয় কম হয়।

    (iv) এদের কুঁজে সম্বিত ফ্যাট বিপাক ক্রিয়ায় বিশ্লিষ্ট হয়ে জল উৎপন্ন করে সারা দেহকোশে সরবরাহ করে। এদের পাকস্থলীতে জলথলি বা ওয়াটার স্যাক থাকায় জল পান করার সময় জল সঞ্চয় করে রাখে। প্রয়োজনে জল দেহে সরবরাহ করে থাকে। 

    🟣উটের লোহিত রক্তকণিকার আকৃতি : 

    উটের লোহিত রক্ত কণিকাগুলি (RBC) ডিম্বাকার (elliptical)। ফলে এই ধরনের রক্তকণিকা অধিকমাত্রায় অক্সিজেন বহন করতে সক্ষম। উটের দেহে জল নিরুদনের (de-hydration) এর সময় RBC-গুলি ডিম্বাকৃতি হওয়ার জন্য ঘন রক্তস্রোতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। উট যখন অধিক মাত্রায় জল পান করে তখন RBC-গুলি প্রায় 240% প্রসারিত হতে পারে এবং সহজে বিদীর্ণ হয় না।

    8. অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য লেখো – 
    (a) পর্ণকাণ্ড, (b) শ্বাসমূল,(c) বায়ুথলি, 
    ও পার্থক্য লেখো—অভিব্যক্তি ও অভিযোজন।
    [ 3+2=5] [Purulia Zilla School]

    ANS. 

    (a) .পর্ণকাণ্ড (Phylloclade) : 

    ক্যাকটাস শুষ্ক ও বালুকাময় পরিবেশে জন্মায়, তাই এরা জেরোফাইটিক উদ্ভিদ। ঊষর পরিবেশে বসবাসকারী ক্যাকটাসের বাষ্পমোচন হ্রাসের জন্য পর্ণকাণ্ডের উপস্থিতি দেখা যায়। সেক্ষেত্রে কাণ্ডটি স্থূল, চ্যাপ্টা, রসালো এবং সবুজ হয়। জল সংরক্ষণ ও সালোকসংশ্লেষের জন্য এরূপ

    অভিযোজন দেখা যায়।

    (b).  শ্বাসমূল (Preumatophore) : 

    সুন্দরী গাছ সুন্দরবনের সিক্ত, কর্দমাক্ত ও লবণাক্ত মৃত্তিকায় জন্মায়। লবণ সহনের জন্য শ্বাসমূল নামক অঙ্গের সৃষ্টি হয়েছে। অতিরিক্ত লবণসমৃদ্ধ ও জলমগ্ন মাটি রঞ্জবিহীন হয় ও মাটিতে অক্সিজেনের মাত্রা কম হয় ফলে শ্বসন

    ব্যাহত হয়। তাই শ্বাসমূলের সাহায্যে বায়ু থেকে সরাসরি শ্বাসবায়ুর আদান-প্রদান ঘটে।

    (c). বায়ুথলি (Air sacs) : 

    পায়রা পক্ষী শ্রেণি অন্তর্গত খেচর প্রাণী, যার বায়ুতে ওড়ার জন্য বিভিন্ন অভিযোজনগত কৌশল দেখা যায়। মূলত বায়ুথলির উপস্থিতি যেখানে ৭টি বায়ুপূর্ণ বায়ুথলি যা পায়রার আপেক্ষিক গুরুত্ব হ্রাস করে ও দেহকে হালকা করে ফলস্বরূপ আকাশে সহজেই উড়তে পারে। উড্ডয়নকালে শ্বসনের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করে।

    🟣 অভিযোজন ও অভিব্যক্তির মধ্যে পার্থক্য :


    9. অভিযোজন ও অভিব্যক্তির সম্পর্ক আলোচনা করো ?

    ➡️অভিযোজন ও অভিব্যক্তির সম্পর্ক : অভিযোজনের সঙ্গে বিবর্তনের সম্পর্ক নিম্নলিখিত তিনটি উক্তিতে প্রকাশ করা যায়—

    (i) পরিবর্তিত পরিবেশে অভিযোজিত হওয়ার মাধ্যমে জীবদের বিবর্তন ঘটে : পরিবেশ নিয়ত পরিবর্তনশীল। এই পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলার জন্য নির্দিষ্ট পরিবেশে বসবাসকারী জীবদের মধ্যে একটা প্রচেষ্টা থাকে। কেন না,

    পরিবর্তিত পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজিত হতে না পারলে তাদের অবলুপ্তির সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু কোনো প্রজাতির অন্তর্ভুক্তি সব সদস্যদের পরিবর্তিত পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা সফল হয় না। দেখা গেছে, এই ধরনের ক্ষেত্রে বিশেষ বিশেষ জেনেটিক গঠনবিশিষ্ট সদস্যের প্রচেষ্টা অন্যান্যদের তুলনায় সফল

    হয়। যাদের ক্ষেত্রে এই সাফল্য ঘটে, তারা পরিবর্তিত পরিবেশে স্থায়ী আসন লাভ করে এবং অন্যান্যরা ধীরে ধীরে অবলুপ্ত হয়ে যায়। এইভাবে অভিযোজনের মাধ্যমে নতুন ভ্যারাইটি (variety) আবির্ভাব ঘটে—অর্থাৎ জীব-বিবর্তন ঘটে।

    (ii) বিবর্তনের পথে কোনো বৈশিষ্ট্যের একবার অবলুপ্তি ঘটলে তার পুনরাবির্ভাব ঘটে না : 

    একথা আমরা জানি যে সরীসৃপ, স্তন্যপায়ী প্রভৃতি প্রাণীদের আবির্ভাব ঘটেছে মাছের মতো

    জলচর প্রাণীর পূর্বপুরুষ থেকে। শ্বাসযন্ত্র বা ফুলকা ত্যাগ করে তার পরিবর্তে স্থলবাসী প্রাণীরা ফুসফুস অর্জন করেছে। কোনো কোনো

    স্থলবাসী প্রাণী, যেমন— তিমি, কুমির, কচ্ছপ ইত্যাদি নানা কারণে আবার জলের জীবনে ফিরে গেছে, কিন্তু জলে শ্বাসকার্য চালানোর জন্য ফুলকা তারা আর ফিরে পায়নি।

    (iii) কোনো প্রজাতি নির্দিষ্ট পরিবেশে একবার পরিপূর্ণরূপে অভিযোজিত হওয়ার পর তার পুনরায় পরিবর্তনের সম্ভাবনা হ্রাস পায় : 

    যেমন— প্রায় পনেরো কোটি বছর আগে বিলুপ্ত লাংফিস ‘সেরাটোডাস’ যে ধরনের পরিবেশে বাস করত, তার বর্তমান বংশধর অস্ট্রেলিয়াবাসী ‘নিওসেরাটোডাস' সেই একই ধরনের পরিবেশে বাস করে। ফলে উভয়ের মধ্যে গঠনগত পরিবর্তন বিশেষ কিছু ঘটেনি। উপরোক্ত তিনটি আলোচনা থেকে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে অভিযোজনের মাধ্যমেই জীবের বিবর্তন ঘটে।







    No comments

    ALL ABTA TEST PAPER 2023-24 PAGES SOLUTIONS at free of cost.

    Space Quiz Space Quiz ...

    Powered by Blogger.