মাধ্যমিক কোশ বিভাজন ও কোশচক্রর সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারণা
কোশ বিভাজন ও কোশচক্র
Cell Division and Cell Cycle
PATR: 1
(কোশ বিভাজন ও কোশচক্রর কিছু ধারণা)
➡️ কোশবিভাজন ও কোশচক্র :
যে প্রক্রিয়ায় জনিতৃ কোশ থেকে অপত্য কোশ সৃষ্টি হয় তাকে কোশবিভাজন বলে
এবং কোশের বৃদ্ধি দশার ও বিভাজন দশার চক্রাকার আবর্তনকে কোশচক্র বলে।
বিজ্ঞানী ফ্লেমিং (1880) প্রথম কোশ বিভাজন পর্যবেক্ষণ করেন।
➡️ ক্রোমোজোম, DNA ও জিনের আন্তঃসম্পর্ক :
কোশের নিউক্লিয়াসমধ্যস্থ নিউক্লিয় জালক থেকে সূত্রাকার অংশ জীবের বংশগত
বৈশিষ্ট্য বহন করে এবং প্রজাতির পরিব্যক্তি, প্রকরণ ও বিবর্তনে মুখ্য ভূমিকা
পালন করে, তাকে ক্রোমোজোম বলে।
DNA-এর কুণ্ডলীকৃত অংশই হল ক্রোমোজোম। DNA-এর বিশেষ বিশেষ অংশ হল জিন।
নিউক্লিওজালক → ক্রোমোজোম → DNA→ জিন
➡️ ক্রোমোজোমের প্রকারভেদ :
দেহগঠন ও লিঙ্গ নির্ধারণের বৈশিষ্ট্য অনুসারে ক্রোমোজোম দুই প্রকার। যথা অটোজোম ও সেক্স ক্রোমোজোম। দেহজ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকারী ক্রোমোজোম হল অটোজোম। মানবদেহে এর সংখ্যা 22 জোড়া এবং লিঙ্গ নির্ধারণে অংশগ্রহণকারী ক্রোমোজোমকে সেক্স
ক্রামোজোম বা হেটেরোজোম বা অ্যালোজোম বলে। মানবদেহে এদের সংখ্যা একজোড়া। অর্থাৎ মানুষের মোট ক্রোমোজোম 23 জোড়া।
➡️ ক্রোমোজোম সংখ্যা :
নির্দিষ্ট প্রজাতির ক্রোমোজোম সংখ্যা সবসময় ধ্রুবক থাকে। মানুষের দেহকোশের ক্রোমোজোম সংখ্যা 46 (2n) এবং গ্যামেটের ক্রোমোজোম সংখ্যা 23 (n)। জীবদের
দেহকোশের ক্রোমোজোম সংখ্যাকে ডিপ্লয়েড (2n) সংখ্যা এবং গ্যামেটের মধ্যে অবস্থিত একসেট ক্রোমোজোমকে হ্যাপ্লয়েড (n) সংখ্যা বলে।
➡️ ক্রোমোজোমের রাসায়নিক উপাদান :
ক্রোমোজোম প্রধানত প্রোটিন ও নিউক্লিক অ্যাসিড নিয়ে গঠিত।
🟣প্রোটিন : ক্রোমোজোমে দু-ধরনের প্রোটিন থাকে। এর প্রায় 45% ক্ষারীয় হিস্টোন প্রোটিন এবং 5% আম্লিক নন-হিস্টোন প্রোটিন থাকে।
🟣 নিউক্লিক অ্যাসিড : ক্রোমোজোমে দুই ধরনের নিউক্লিক অ্যাসিড থাকে। যথা DNA ও RNA ।
DNA-তে ডিঅক্সিরাইবোজ নামক পেন্টোজ শর্করা, নাইট্রোজেনাস বেস-পিউরিন অ্যাডেনিন (A) ও গুয়ানিন (G)) এবং পিরিমিডিন (সাইটোসিন (C) ও থাইমিন (T)) এবং একটি ফসফোরিক অ্যাসিড উপস্থিত থাকে।
RNA-এই জৈব অণুতে রাইবোজ নামক পেন্টোজ শর্করা, নাইট্রোজেনাস বেস পিউরিন অ্যাডেনিন (A) ও গুয়ানিন (G)) এবং পিরিমিডিন (সাইটোসিন (C) ও ইউরাসিল (U)) এবং একটি ফসফোরিক অ্যাসিড উপস্থিত থাকে।
♾️ ইউক্রোমাটিন :
এই ক্রোমাটিন খুব সূক্ষ্ম, স্থির নিউক্লিয়াসে এরা প্রসারিত অবস্থায় থাকে, ক্ষারীয় রঞ্জকে হালকা বর্ণ ধারণ করে, এর সক্রিয় জিন
বহন করে।
♾️হেটেরোক্রোমাটিন :
এই ক্রোমাটিন অপেক্ষাকৃত পুরু, স্থির নিউক্লিয়াসে কুণ্ডলীকৃত অবস্থায় থাকে, ক্ষারীয় রঞ্জকে গাঢ় বর্ণ ধারণ করে, এরা সক্রিয় জিন বহন করে না।
➡️ কোশ বিভাজনে অংশগ্রহণকারী কোশীয় অঙ্গাণু :
কোশ বিভাজনে অংশগ্রহণকারী কোশীয় অঙ্গাণু হল—
1 নিউক্লিয়াস : এটি কোশ বিভাজনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে, এটি প্রোফেজ, মেটাফেজ, অ্যানাফেজ ও টেলোফেজ দশায় বিভাজিত হয়।
2 সেন্ট্রোজোম ও মাইক্রোটিউবিউল : এরা কোশ বিভাজনকালে সেন্ট্রোজোম প্রাণীকোশে ও মাইক্রোটিউবিউল উদ্ভিদ কোশে বেমতন্তু গঠন করে।
3 রাইবোজোম ঃ প্রোটিন সংশ্লেষে সাহায্য করে।
4 মাইটোকনড্রিয়া : কোশ বিভাজনের প্রয়োজনীয় শক্তির জোগান দেয়।
➡️. কোশ বিভাজনের তাৎপর্য :
কোশ বিভাজনের প্রধান তাৎপর্য হল— বৃদ্ধি, ক্ষয়পূরণ এবং প্রজনন।
➡️. কোশচক্র :
কোশের বৃদ্ধি ও বিভাজন দশার চক্রাকার আবর্তনকে কোশচক্র বলে। কোশচক্রের
দুটি পর্যায় ইন্টারফেজ দশা ও মাইটোটিক দশা।
🟣 ইন্টারফেজ দশা : এটি কোশবিভাজনের প্রস্তুতি দশা। এই দশায় DNA, RNA ও প্রোটিনের সংশ্লেষণের কাজ সংঘটিত হয়। এই দশা তিনটি উপদশায় বিভক্ত। যথা—
i. G1 দশা ঃ এই দশায় প্রোটিন ও RNA সংশ্লেষিত হয়।
ii. S দশা ঃ এই দশায় DNA সংশ্লেষণ ঘটে।
iii. G2 দশা ঃ এই দশায় চরম বিপাকীয় সক্রিয়তা দেখা যায়।
G1 দশায় যেখানে কোশচক্রটি থেমে যায় তাকে Go দশা বলে। স্নায়ুকোশ, পরিণত লোহিত
রক্তকণিকায় দেখা যায়।
🟣 মাইটোটিক ফেজ : বিভাজন দশাই হল মাইটোটিক ফেজ। এটি প্রোফেজ, মেটাফেজ,
অ্যানাফেজ ও টেলোফেজ দশায় বিভক্ত।
♾️ কোশচক্রের গুরুত্ব : কোশ চক্রের বিভিন্ন বিন্দুতে নিয়ন্ত্রণ বিনষ্ট হলে অনিয়ন্ত্রিত কোশ
বিভাজন ঘটে যা টিউমার সৃষ্টি করে। এটি বিনাইন ও ম্যালিগন্যান্ট প্রকারের হতে পারে।
ম্যালিগন্যান্ট টিউমারই হল ক্যানসার।
➡️ ক্রসিং ওভার :
সমসংস্থ ক্রোমোজোমের নন-সিস্টার ক্রোমাটিড দুটির মধ্যে খণ্ড বিনিময়ের ঘটনাকে ক্রসিং ওভার বলে।
● পদ্ধতি : সমসংস্থ ক্রোমোজোম দুটি জোট বেঁধে বাইভ্যালেন্ট গঠন করে। এই পদ্ধতিকে সাইন্যাপসিস বলে। বাইভ্যালেন্টের প্রতিটি ক্রোমোজোম
টেট্রাড গঠন করে। টেট্রাডের নন-সিস্টার ক্রোমাটিড দ্বয়ের মধ্যে DNA খণ্ডাংশের বিনিময় ঘটে, একে ক্রসিংওভার বলে। এই অংশে গঠিত 'x' আকৃতির গঠনটিকে কায়াজমা বলে।
➡️ Some Important Terms
✡️অ্যানাফেজ (Anaphase) : বেমের দুই বিপরীত মেরুর দিকে ক্রোমোজোমদের চলন।
✡️কোশ চক্র (Cell cycle) : যে চক্রাকার পদ্ধতিতে একটি কোশ থেকে দুটি কোশ সৃষ্টি হয় অর্থাৎ কোশের বৃদ্ধি ও জননের চক্রবৎ পুনরাবৃত্তি।
✡️কোশ বিভাজন (Cell division) : জনিতৃকোশ থেকে অপত্য কোশ সৃষ্টি হওয়া।
✡️সেন্ট্রিওল (Centriole) : প্রাণীকোশের সাইটোপ্লাজমে নিউক্লিয়াসের নিকটে অবস্থিত ৭টি ত্রয়ী অণুনালিকা দিয়ে গঠিত পিপে আকৃতির অঙ্গাণু।
✡️ সেন্ট্রোমিয়ার (Centromere) : যে চাকতির মতো অংশ ক্রোমোজোমের ক্রোমাটিডদ্বয়কে পরস্পর সংলগ্ন রাখে।
✡️কাইনেটোকোর (Kinetochore) : সেন্ট্রোমিয়ার অঞ্চলে অবস্থিত যে প্লেটের মতো চাকতি বেমতত্তুর অণুনালিকার সঙ্গে যুক্ত হয়ে কোশবিভাজনের সময় ক্রোমোজোমের অ্যানাফেজিক চলনকে নিয়ন্ত্রণ করে, তাকে কাইনেটোকোর বলে।
✡️ক্রোমাটিড (Chromatid) : প্রতিটি ক্রোমোজোম যে একজোড়া সূত্রাকার অংশ নিয়ে গঠিত হয় তাদের প্রত্যেকটিকে ক্রোমাটিড বলে।
✡️ ক্রোমোজোম (Chromosome) : কোশের নিউক্লিয়াসে অবস্থিত যে সূত্রাকার অংশ জীবের বংশগতির বৈশিষ্ট্যাবলি পুরুষানুক্রমে বহন করে তাকে ক্রোমোজোম বলে।
✡️স্যাটেলাইট (Satelite) : গৌণ খাঁজযুক্ত ক্রোমোজোমের গৌণ খাঁজের পরবর্তী ক্ষুদ্র ফোলা অংশটিকে স্যাটেলাইট বলে। স্যাটেলাইট যুক্ত ক্রোমোজোমকে SAT ক্রোমোজোম বলে।
✡️ডায়াকাইনেসিস (Diakinesis) : মিয়োসিসের প্রথম প্রফেজের শেষ উপদশা, যেখানে বাইভ্যালেন্টগুলি মোটা ও ছোটো হতে থাকে।
✡️ডিপ্লয়েড (Diplotene) : মিয়োসিসের প্রথম প্রফেজের চতুর্থ উপদশা যেখানে কায়াজমা গঠন সম্পন্ন হয় এবং কায়াজমা ক্রোমোজোমের দুই বিপরীত প্রান্তে সরে যেতে থাকে।
✡️ লেপ্টেটিন (Leptotene) : মিয়োসিসের প্রথম প্রফেজের প্রথম উপদশা। যেখানে ক্রোমাটিন তন্তু থেকে ক্রোমোজোম সৃষ্টি হয়।
✡️ ডিপ্লোটিন (Diplotene) : মিয়োসিসের প্রথম প্রফেজের চতুর্থ উপদশা যেখানে কায়াজমা গঠন সম্পন্ন হয় এবং কায়াজমা ক্রোমোজোমের দুই বিপরীত প্রান্তে সরে যেতে থাকে।
✡️ডিসজাংশন (Disjunction) : অ্যানাফেজ দশায় সমগোত্রীয় ক্রোমোজোমগুলির পৃথক হওয়া।
✡️ডায়াড (Diad) : ক্রোমোজোমের দ্বিত্বকরণের পূর্বে সমগোত্রীয় ক্রোমোজোমদ্বয়ের জোড়।
✡️ইকুইয়েটোরিয়াল প্লেট (Equatorial plate) : বেমের মধ্যস্থল বা
বিষুব অঞ্চল।
✡️ হ্যাপ্লয়েড (Haploid) : একক সংখ্যক সেট ক্রোমোজোমবিশিষ্ট কোশ,
যেমন—জনন কোশ।
✡️হোমোলোগাস ক্রোমোজোম (Homologous Chromosoes) :
সমগোত্রীয় একজোড়া পিতৃ ও মাতৃ ক্রোমোজোম।
✡️ইন্টারফেজ (Interphase) : কোশবিভাজনের পূর্বে যে দশায়
নিউক্লিয়াসে RNA, প্রোটিন ATP ও DNA সংশ্লেষিত হয়, তাকে ইন্টারফেজ বলে।
✡️ক্যারিওকাইনেসিস (Karyokinesis) : নিউক্লিয়াসের বিভাজন পদ্ধতি।
✡️মিয়োসিস (Meiosis) : যে বিভাজন প্রক্রিয়ায় একটি জনন মাতৃকোশ
থেকে অর্ধসংখ্যক ক্রোমোজোমবিশিষ্ট চারটি অপত্য কোশ সৃষ্টি হয়।
✡️মেটাফেজ (Metaphase) : কোশবিভাজনের যে দশায় বেম গঠিত হয়
এবং ক্রোমোজোমগুলি বেমের বিষুব অঞ্চলে অবস্থান করে।
✡️মাইটোসিস (Mitosis) : যে প্রকার কোশ বিভাজনে একটি জনিতৃ কোশ থেকে সমসংখ্যক ক্রোমোজোম বিশিষ্ট দুটি অপত্য কোশ সৃষ্টি করে।
✡️নন্-ডিসজাংশন (Non disjunction) : মিয়োসিসের অ্যানাফেজ- দশায় ক্রোমোজোমদের পৃথক হতে না পারা।
✡️প্যাকাইটিন (Pachytene) : মিয়োসিসের প্রথম প্রফেজের যে উপদশায় হোমোলোগাস ক্রোমোজোমদ্বয়ে টেট্রাড গঠিত হয় ও টেট্রাডের
নন্-সিস্টার ক্রোমাটিডদ্বয়ের মধ্যে ক্রসিংওভার ঘটে।
✡️স্পিন্ডল (Spindle) : প্রোমেটাফেজ দশায় বেমতন্তু দিয়ে গঠিত যে অ্যাপারেটাস সৃষ্টি হয়, যার মধ্যে ক্রোমোজোম অবস্থান করে তাকে
বেম বা স্পিন্ডল বলে।
✡️সাইন্যাপসিস (Synapsis) : মিয়োসিসের জাইগোটিন উপদশায় সমগোত্রীয় ক্রোমোজোমদ্বয়ের জোড় বাঁধার পদ্ধতি।
✡️সাইন্যাপটোনেমাল কমপ্লেক্স (Synaptonemal complex) :
জাইগোটিন উপদশায় জোড় বাঁধা ক্রোমোজোমদ্বয়ের মাঝে অবস্থিত সাইটোপ্লাজমীয় বস্তু।
✡️টেলোফেজ (Telophase) : কোশবিভাজনের শেষ বা চতুর্থ দশা যখন
নিউক্লিয়াসের পুনর্গঠন হয়ে অপত্য নিউক্লিয়াস সৃষ্টি হয়।
✡️ক্রসিং ওভার (Crossing over) : মিয়োসিস কোশ বিভাজনের
প্রথম প্রফেজের প্যাকাইটিন উপদশায় সমসংস্থ ক্রোমোজোমদ্বয়ের নন-সিস্টার ক্রোমাটিডদ্বয়ের কায়াজমা অঞ্চলে যে জিন খণ্ডের বিনিময় ঘটে।
✡️ক্রসওভার (Crossover) : পুনঃসংযুক্তির ফলে উৎপন্ন নতুন সংযোজনযুক্ত ক্রোমাটিড
আরো পড়ুন....CLICK THE LINK
Post a Comment