মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ধারনা
বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ( Heredity and Some Common Genetic Diseases)
_____________________________
Topic : 6
_____________________________
কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ সম্পর্কে ধারনা
- 1.থ্যালাসেমিয়া :
- 2.হিমোফিলিয়া :
- 3.বর্ণান্ধতা (Colour Blindness) :
- ● নীল-বর্ণান্ধতা বা ট্রাইটানোপিয়া
- 4. জেনেটিক কাউন্সেলিং :
- ⏩ Special Notes.
- জনগোষ্ঠী থেকে থ্যালাসেমিয়া দূর করার জন্য যেসব উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন-
- ● হিমোফিলিক আর্থ্রাইটিস ঃ
- > অর্জিত বর্ণান্ধতা :
- > সেরিব্রাল অ্যাক্রোম্যাটোপসিয়া :
- > প্রোসোপ্যাগনোসিয়া :
1.থ্যালাসেমিয়া :
থ্যালাসেমিয়া একপ্রকার প্রচ্ছন্ন অটোজোমাল জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত RBC-এর বিশৃঙ্খলা, যেখানে এক বা একাধিক হিমোগ্লোবিন পলিপেপটাইড শৃঙ্খলের অনুপস্থিতি, হ্রাসপ্রাপ্ত সংশ্লেষ বা গঠনগত বিচ্যুতি যার তীব্র বা মৃদু রক্তাল্পতা, পাণ্ডুরোগ, হ্রস্ব জীবনকাল ইত্যাদি পরিলক্ষিত হয়।
>লক্ষণ :
(i) এই রোগে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের ত্রুটি এবং রক্তাল্পতা দেখা যায়। (ii) RBC-র এর আকার ছোটো হয়। (iii) অস্থি দুর্বল ও বিকৃত হয়, (iv) যকৃৎ ও প্লিহার বৃদ্ধি ঘটে, (v) কালচে মুত্র উৎপন্ন হয়।
>থ্যালাসেমিয়া দু-প্রকার
Alpha ও Beta থ্যালাসেমিয়া।
Alpha থ্যালাসেমিয়ায় Alpha polypeptide শৃঙ্খল ও Beta থ্যালাসেমিয়ায় Beta polypeptide শৃঙ্খল সংশ্লেষে ত্রুটি দেখা যায়।
2.হিমোফিলিয়া :
হিমোফিলিয়া একপ্রকারের রক্তক্ষরণজনিত বংশগত রোগ। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত জমাট বাঁধতে দীর্ঘ সময় লাগে অর্থাৎ রক্ত তন্বিত হয় না।
> প্রকার :
হিমোফিলিয়া প্রধানত দু-প্রকার। যথা—
(1) হিমোফিলিয়া A—এক্ষেত্রে রক্ত তল্গুনের VIII নম্বর ফ্যাক্টর উৎপন্ন হয় না।
(2) হিমোফিলিয়া B- এক্ষেত্রে রস্তুতপ্তনের IX নম্বর ফ্যাক্টর সংশ্লেষিত হয় না।
> লক্ষণ :
হিমোফিলিয়া একটি বংশগত রোগ। এই রোগে আঘাতপ্রাপ্ত স্থান থেকে অবিরাম রক্তক্ষরণ হতে থাকে। এক্ষেত্রে স্বাভাবিক পুরুষ ও হিমোফিলিক মহিলা এবং হিমোফিলিক পুরুষ ও স্বাভাবিক মহিলার বিবাহ হওয়া নয়।
3.বর্ণান্ধতা (Colour Blindness) :
সাধারণ কথায় বর্ণান্ধতা কথার অর্থ হল রং চিনতে না পারা। মানুষের লাল/সবুজ বর্ণান্ধতাই সেক্স লিংকেজের অন্তর্ভুক্ত। X-ক্রোমোজোমে অবস্থিত একটি জিনের মিউটেশনের জন্য এরকম বর্ণান্ধতা জন্ম নেয়। মিউটেশনে উৎপন্ন জিনটি প্রচ্ছন্নধর্মী।
> সংজ্ঞা (Definition) :
যে বৈশিষ্ট্যের বহিঃপ্রকাশে কোনো মানুষ লাল-সবুজ বর্ণের পার্থক্য বুঝতে পারে না বা বর্ণ চিনতে ভুল করে, সেই প্রকার অস্বাভাবিকতাকে বর্ণান্ধতা বলে।
লাল বর্ণ চিনতে না পারাকে লাল-বর্ণান্ধতা বা প্রোটানোপিয়া এবং সবুজ বর্ণ চিনতে না পারাকে সবুজ বর্ণান্ধতা বা ডিউটেরানোপিয়া বলে।
>কারণ (Causes) :
বর্ণান্ধ জিনটি প্রচ্ছন্ন প্রকৃতির এবং ‘X’ ক্রোমোজোম অবস্থিত। পুরুষদের ক্ষেত্রে X ক্রোমোজোমে বর্ণান্ধ জিন থাকলে সে বর্ণান্ধ হবে, কিন্তু স্ত্রীদের ক্ষেত্রে দুটি 'X' ক্রোমোজোমে বর্ণান্ধ জিন থাকলে তবে স্ত্রীলোকরা বর্ণান্ধ হবে।
> লক্ষণ (Symptoms) :
লাল সবুজ বর্ণ চিনতে না পারা।
● নীল-বর্ণান্ধতা বা ট্রাইটানোপিয়া
ক্রোমোজোম সংযোজিত রোগ নয়।
স্নায়ু রোগ, ওষুধের বিষক্রিয়া থেকে প্রভৃতির কারণে এটি দেখা যায়।
4. জেনেটিক কাউন্সেলিং :
দুটি পরিবারের মধ্যে যখন বিবাহের প্রস্তাব ওঠে তখন উভয় পরিবারের রক্ত পরীক্ষা করে জানা দরকার তাদের বংশে কারও মাইনর থ্যালাসেমিয়া আছে কিনা। যদি উভয় পরিবারে মাইনর থ্যালাসেমিয়া থাকে তাহলে তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিবাহ হলে তাদের সন্তান-সন্ততিতে থ্যালাসেমিয়া রোগ প্রকাশ পাবে এবং তীব্র রপ্তহীনতায় ভুগে মারা যাবে। তাই সেই দুটি পরিবারের মধ্যে বিবাহবন্ধন হওয়া উচিত নয়। এই ধরনের পরামর্শকে জেনেটিক কাউন্সেলিং বলে।
⏩ Special Notes.
জনগোষ্ঠী থেকে থ্যালাসেমিয়া দূর করার জন্য যেসব উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন-
(i) থ্যালাসেমিয়া রোগের ভয়াবহতা
জনগণকে জানোনো।
(ii) বিবাহের পূর্বে
পাত্র এবং পাত্রী উভয়ের থ্যালাসেমিয়ার
রক্ত পরীক্ষা করা।
(iii) বিবাহ রেজিস্ট্রার
অফিসে থ্যালাসেমিয়ার রক্ত পরীক্ষা করা
বাধ্যতামূলক—তার পোস্টার
টাঙানো ইত্যাদি।
● থ্যালাসেমিয়া রোগীকে যেমন রক্ত দান
করার প্রয়োজন হয়, তেমন রোগীর দেহ
থেকে চিলেশন পদ্ধতিতে (chelation
therapy) লোহা অপসারণ বা অস্থিমজ্জার
প্রতিস্থাপনের সাহায্যে রোগ নির্মূল করা
সম্ভবপর হয়েছে।
● থ্যালাসেমিয়া মেজর রোগটিকে
এরিথ্রোব্লাস্টিক অ্যানিমিয়া রোগ রূপে
বহিঃপ্রকাশ ঘটান এক আমেরিকান চিকিৎসক থমাস কুলি। তিনি 1925 খ্রিস্টাব্দে এক শিশুর দেহে এই রোগটি পর্যবেক্ষণ করেন। তাঁর নাম অনুসারে এই রোগকে বর্তমানে কুলির অ্যানিমিয়া (Cooley's Anaemia) বলে।
● হিমোফিলিক আর্থ্রাইটিস ঃ
রক্ততঞ্জনে সাহায্যকারী ফ্যাক্টরগুলি হিমোফিলিয়ার রোগজনিত কারণে অভাব ঘটে। যার ফলে অতিরিক্ত পরিমাণ রক্তক্ষরণ ঘটে। যা পরবর্তী ক্ষেত্রে আর্থ্রাইটিসের জন্ম দেয়। উদাহরণস্বরূপ— হাঁটু, কনুই, বিভিন্ন অস্থিসন্ধি ভাঁজ করার সময় এই ধরনের রোগের ফলে তীব্র যন্ত্রণা অনুভূত হয়।
> অর্জিত বর্ণান্ধতা :
অনেক সময় আঘাতজনিত কারণে আমাদের মস্তিষ্কের অপটিক স্নায়ুক্ষতিগ্রস্ত হলে পুরুষ এবং স্ত্রী উভয়ের ক্ষেত্রেই এই বর্ণান্ধতাজনিত রোগ দেখা যায়। বর্ণান্ধতা জিনঘটিত রোগ হওয়া সত্বেওশুধুমাত্র আঘাতজনিত কারণে এই রোগ দেখা যেতে পারে।
> সেরিব্রাল অ্যাক্রোম্যাটোপসিয়া :
টিউমার, রক্তক্ষরণ প্রভৃতি রোগজনিত কারণে
গুরুমস্তিষ্কের দর্শণ গ্রাহক অংশে ত্রুটি লক্ষ করা
যায়। যারফলে বর্ণান্ধতার সৃষ্টি হয়। কিন্তু
রেটিনামধ্যস্থ আলোকগ্রাহক কোশে কোনও
ত্রুটি থাকে না।
> প্রোসোপ্যাগনোসিয়া :
এটি একধরনের রোগ যার ফলে কোনো ব্যক্তি নিজের লোকেদের মুখ চিনতে পারে না। এক্ষেত্রে গুরুমস্তিষ্কের দর্শণগ্রাহক কেন্দ্রের ত্রুটির ফলেই এই রোগটি দেখা যায়।
● হিমোফিলিয়া রোগটিকে যকৃৎ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে সারানো সম্ভব। কারণ রক্ততজ্ঞনে সহায়কারী প্রয়োজনীয় ফ্যাক্টরগুলি যকৃতের মধ্যেই তৈরি হয়। ফলস্বরূপ, যকৃৎ প্রতিস্থাপনের ফলে রক্ততঞনকারী ওই ফ্যাক্টরগুলি পুণরায় তৈরি হতে পারে।
READ MORE--CLICK HERE
Post a Comment