মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের অভিব্যক্তি 100% কমোন যগ্য সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর (SAQ)
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর (SAQ)
1. প্রাকৃতিকভাবে শুধু বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির মাছ আছে, এমন একটি পুকুরে বেশ কিছু তিলাপিয়া মাছ ছাড়া হল। বেঁচে থাকতে গেলে ওই তিলাপিয়াদের যে যে ধরনের জীবনসংগ্রাম করতে হবে তা ভেবে লেখো।
[M.P. '20]
ANS . প্রাকৃতিকভাবে শুধু বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির মাছ আছে, এমন একটি পুকুরে বেশকিছু তিলাপিয়া মাছ ছাড়া হল। বেঁচে থাকতে গেলে তিলাপিয়াকে পরিবেশগত, অন্ত ও আন্তঃপ্রজাতির সংগ্রাম করতে হবে।
3. মানবদেহের মেরুদণ্ডে ও খাদ্যনালিতে অবস্থিত একটি করে নিষ্ক্রিয় অঙ্গের নাম লেখো।
[M.P. 18]
ANS. মানবদেহের মেরুদণ্ডে অবস্থিত নিষ্ক্রিয় অঙ্গ কক্সিস এবং খাদ্যনালিতে অবস্থিত নিষ্ক্রিয় অঙ্গ ভারমিফর্ম অ্যাপেনডিক্স।
4. গঠন ও কাজ; বিবর্তনের ধরন নির্দেশক উপরোক্ত দুটি বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে সমবৃত্তীয় অঙ্গের ধারণাটি উপযুক্ত উদাহরণসহ প্রতিষ্ঠা করো। [M.P.. 20]
ANS.
সংজ্ঞা : যেসব অঙ্গ একই কাজ করে কিন্তু গঠন ও উৎপত্তি আলাদা তাদের সমবৃত্তীয় অঙ্গ বলে। উদাহরণ—পতঙ্গের ডানা, পাখির ডানা এবং
বাদুড়ের ডানা। পতঙ্গের ডানা তৈরি হয় কাইটিন (chitin) দ্বারা গঠিত পর্দা দ্বারা, পাখির ডানা পালক দ্বারা গঠিত, বাদুড়ের ডানা প্যাটাজিয়াম
(patagium), যা ত্বকের অংশ। সমবৃত্তীয় অঙ্গ একই পরিবেশে জীবদের অভিযোজনের প্রমাণ। সমবৃত্তীয় অঙ্গ সৃষ্টির ঘটনাকে বলা হয় অ্যানালজি (Analogy)। অভিসারী অভিব্যক্তির (Convergent evolution) ফলে সমবৃত্তীয় অঙ্গ গঠিত হয়। আঙুরলতার আকর্ষ (রূপান্তরিত কাণ্ড), মটরের আকর্ষ (রূপান্তরিত পাতা)— প্রতিটির একই কাজ (আরোহণে সাহায্য করা) হলেও এরা পৃথক অঙ্গের রূপান্তর অর্থাৎ সমবৃত্তীয় অঙ্গ।
5. জীবনের রাসায়নিক উৎপত্তি সংক্রান্ত মিলার ও উরের পরীক্ষায় ব্যবহৃত বিক্রিয়কগুলির এবং উৎপন্ন একটি জৈব যৌগের নাম লেখো।[M.P.17)
ANS . জীবনের রাসায়নিক উৎপত্তি সংক্রান্ত মিলার ও উরের পরীক্ষায় ব্যবহৃত বিক্রিয়কগুলি হল – মিথেন, অ্যামোনিয়া এবং হাইড্রোজেন।
উৎপন্ন যৌগগুলি হল— অ্যামাইনো অ্যাসিড, অ্যাসপারটিক অ্যাসিড, ফরমিক অ্যাসিড, অ্যালানিন ইত্যাদি।
6. ঘোড়ার বিবর্তনে চারটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য লেখো যা পরিবর্তিত হয়েছে। [M.P.'17]
ANS. গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যসমূহ:
(a) পায়ের আঙুলের সংখ্যা হ্রাস পাওয়া।
(b) শক্ত মাটিতে দৌড়াবার জন্য শক্ত খুরের আবির্ভাব ও দৈহিক উচ্চতা বৃদ্ধি।
(c) পেষক ও পুরপেষক ক্রাউনের আয়তন বৃদ্ধি।
(d) পায়ের তিন নম্বর আঙুলের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ বৃদ্ধি।
7. জীবসৃষ্টির সায়ানোজেন তত্ত্ব বলতে কী বোঝো?
ANS .জার্মানবিজ্ঞানী ফুজার-এর মতে পৃথিবীর শীতলীকরণের সময় কার্বন ও নাইট্রোজেন মিলিত হয়ে সায়ানোজেন নামক প্রোটিন যৌগ উৎপন্ন করে। সায়ানোজেন থেকে প্রোটোপ্লাজমের উৎপত্তি ঘটে। এই ধারণাটিকে
সায়ানোজেন মতবাদ বলে।
8. বেল ও ক্যাকটাসের কাঁটা কীসের রূপান্তর?
ANS. বেলগাছের কাঁটা হল শাখার রূপান্তর এবং ক্যাকটাসের কাঁটা হল পাতার রূপান্তর। এই দুই অঙ্গের উৎপত্তি ভিন্ন হলেও কার্যগত দিক থেকে এরা এক। তাই এদের পরস্পরের সমবৃত্তীয় অঙ্গ বলা যায়।
9. যোগ্যতমের জয়ের মাপকাঠি কী?
ANS. যোগ্যতমের জয়ের মাপকাঠি বলতে বোঝায় সেই সমস্ত জীবকে যারা বেশি সংখ্যায় সন্তান-সন্ততি বা অপত্য উৎপন্ন করতে পারে ও পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারে।
10. সিডনি ফক্স কীভাবে প্রোটিনয়েড তৈরি করেন?
ANS. Sydney Fox (1957) 18 টি অ্যামাইনো অ্যাসিডের মিশ্রণকে শুষ্ক অবস্থায় তাপ প্রয়োগ করে তা ঠান্ডা করেন। দেখা যায়, অ্যামাইনো
অ্যাসিডগুলি যুক্ত হয়ে পলিপেপটাইডের অনুরূপ প্রোটিনয়েড তৈরি করে।
11. সমবৃত্তি অঙ্গের অভিব্যক্তিগত গুরুত্ব আলোচনা করো।
ANS. সমবৃত্তি অঙ্গের অভিব্যক্তিগত গুরুত্ব হল–
(i) প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য জীবের দৈহিক গঠনের অভিযোজন জৈব অভিব্যক্তির পথকে প্রশস্ত করে।
(ii) ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমে বিভিন্ন উদ্ভিদ ও
প্রাণীর সৃষ্টির স্বপক্ষে প্রমাণ দেয়।
(iii) বিভিন্ন শ্রেণির জীবের মধ্যে সমবৃত্তি
অঙ্গের উপস্থিতি অভিসারী বিবর্তনের স্বপক্ষে প্রমাণ বহন করে।
মৌমাছির হুল ও কাঁকড়াবিছের হুল হল সমবৃত্তীয় অঙ্গের উদাহরণ।
12. অভিব্যক্তিতে সমসংস্থ অঙ্গের গুরুত্ব কী?
ANS. সমসংস্থ অঙ্গের পারস্পারিক তুলনামূলক ব্যাখ্যা অভিব্যক্তিতে গুরুত্ব অপরিসীম। যথা—
(i) সমসংস্থ অঙ্গ সমন্বিত জীবেরা একই পূর্বপুরুষ থেকে সৃষ্টি লাভ করেছে। তবে ভিন্ন পরিবেশে অভিযোজনের জন্য ভিন্ন
আকৃতির হয়।
(ii) সমসংস্থ অঙ্গের দ্বারা অপসারী বিবর্তন ব্যাখ্যা করা যায়।
(ii) জীব বিবর্তনে পরিবেশের প্রভাব ও অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য কীভাবে ধীরে ধীরে অভিশান্তিতে সাহায্য করে তা সম্পর্কে ধারণা লাভ করি।
13. মানুষ, ঘোড়া প্রভৃতির অগ্রবাহুর তিনটি হাড়-এর নাম লেখো।
ANS. মানুষ, ঘোড়া প্রভৃতির অগ্রবাহুর তিনটি হাড়ের নাম হল-
হিউমেরাস, রেডিয়াস আলনা, কারপাল।
14. জীবনের রাসায়নিক উৎপত্তি সংক্রান্ত মিলার ও উরের পরীক্ষায় ব্যবহৃত বিক্রিয়কগুলির এবং উৎপন্ন একটি জৈব যৌগের নাম লেখো।
ANS. মিলারের পরীক্ষার বিক্রিয়কগুলি হল- জলীয় বাষ্প, মিথেন, হাইড্রোজেন, অ্যামোনিয়া।
বিক্রিয়ালপ জৈবযৌগ হল- গ্লাইসিন।
15. অভিব্যক্তি বা জৈব অভিব্যক্তি বা জীব বিবর্তন কাকে বলে?
ANS . যে মন্থর ও গতিশীল ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় কোনো সরল উদ্বংশীয় জীব থেকে ক্রমান্বয়ে জিনগত ভাবে ভিন্ন নতুন জটিল প্রজাতির উদ্ভব হয়, তাকে অভিব্যক্তি বলে।
16. বিজ্ঞানী মিলার ও ঊরে রাসায়নিক সংশ্লেষ সম্পর্কিত পরীক্ষার জন্য কোন্ কোন্ উপাদান নির্বাচিত করেছিলেন?
ANS. মিলার ও ঊরে তাঁদের পরীক্ষার জন্য মিথেন, অ্যামোনিয়া ও হাইড্রোজেন গ্যাস 2:2:1 অনুপাতে নিয়ে উচ্চ তাপমাত্রায় জলীয় বাষ্পে
রেখে পরীক্ষাটি করেছিলেন।
17. অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ বলতে কী বোঝো?
ANS . জীবের জীবদ্দশায় পরিবেশের প্রভাবে যে সব বৈশিষ্ট্য অর্জিত হয় তা বংশপরস্পরায় পরবর্তী প্রজন্মগুলিতে সঞ্চারিত হয় ফলে কালক্রমে কোনো একটি জনুতে এত নতুন বৈশিষ্ট্যের সমাহার ঘটে ফলে তাকে তার উৎস জীব থেকে পৃথক বলে মনে হয় এবং প্রকৃতিতে একটি নতুন প্রজাতির উদ্ভব ঘটে।
18. মিলার ও উরের পরীক্ষায় কী কী যৌগ উৎপন্ন হয়েছিল ?
ANS. তাঁদের পরীক্ষার গ্লাইসিন, গ্লাইকোলিক অ্যাসিড, অ্যালানিন, ল্যাকটিক অ্যাসিড, সাকসিনিক অ্যাসিড, অ্যাসপারটিক অ্যাসিড, ফরমিক অ্যাসিড, অ্যাসেটিক অ্যাসিড, ইউরিয়া, অ্যাডেনিন প্রভৃতি যৌগ উৎপন্ন হয়েছিল।
19. রাসায়নিক বিবর্তনবাদ বা রাসায়নিক সংশ্লেষবাদের মূল বক্তব্য কী?
ANS. বিজ্ঞানী ও পারিন (1920) এবং বিজ্ঞানী হ্যালডেন (1928)-এর মতে আদিম পৃথিবীতে উত্তপ্ত সমুদ্রের জলে সরল যৌগগুলি, বিভিন্ন প্রাকৃতিক শর্তাবলি, যেমন——–বিদ্যুৎস্ফুলিঙ্গ, অতিবেগুনি রশ্মি, ও মহাজাগতিক
বিকিরণের প্রভাবে ধীরে ধীরে জটিল যৌগ গঠনের মাধ্যমে কালক্রমে জীব সৃষ্টি হয়েছে।
20. পৃথিবী কবে সৃষ্টি হয়েছিল? পৃথিবীর আদিম পরিবেশ কেমন ছিল?
ANS. প্রায় 450 কোটি বছর পূর্বে সূর্যের অংশ থেকে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় পৃথিবীতে, কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন প্রভৃতি উপাদানগুলি মুক্ত আয়নীত অবস্থায় ছিল। পৃথিবীর আদিম পরিবেশ ছিল বিজারক ধর্মী। মুক্ত অক্সিজেন O, পরিবেশে ছিল না।
21. ল্যামার্কের মতবাদের বিপক্ষে একটি উদাহরণ দাও।
ANS. বিজ্ঞানী ভাইসম্যান (Weismann) একজোড়া ইঁদুর দম্পতির লেজ কের্টে দিয়ে তাদের প্রজনন ঘটান। উৎপন্ন অপত্যদের লেজ কেটে দিয়ে তাদের প্রজনন। এই ভাবে 35 জনু পর্যন্ত লেজ কাটা ইঁদুরের প্রজন ঘটিয়েও কোনো লেজবিহীন ইঁদুর জন্মাতে দেখেননি।
22. ল্যামার্কের মতবাদের স্বপক্ষে একটি উদাহরণ দাও।
ANS. সাপের পূর্বপুরুষের গিরগিটির মতো চারটি পা ছিল, কিন্তু ভূগর্ভ অভিযোজনের ফলে পায়ের ক্রমাগত অব্যবহারের ফলে বর্তমান সাপের পা সম্পূর্ণভাবে লুপ্ত হয়েছে।
23. ‘অস্তিত্বের জন্য জীবন সংগ্রাম' বলতে কী বোঝো?
ANS . এটি ডারউইনবাদের একটি প্রতিপাদ্য বিষয়, ডারউইনের মতে প্রকৃতিতে জীবের জ্যামিতিক ও গাণিতিক হারে সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে, কিন্তু জীবের খাদ্য ও বাসস্থান সীমিত হওয়ায় জীবকে বেঁচে থাকার জন্য যে কঠিন প্রতিযোগিতা বা সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হয়, ডারউইন একে ‘অস্তিত্বের জন্য জীবন সংগ্রাম' বলে আখ্যা দিয়েছেন।
এই সংগ্রাম তিনটি ধারায় ঘটে, যথা—
(i) অন্তঃপ্রজাতির সংগ্রাম,
(ii) আন্তঃপ্রজাতির সংগ্রাম, এবং
(ii) প্রতিকূল পরিবেশের বিরুদ্ধে সংগ্রাম।
24. ভেদ বা প্রকরণ বলতে কী বোঝো?
ANS. ডারউইনের মতে জীবদের প্রকৃতিতে অবিরত ত্রিধারা সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হতে হয় বলে তাদের দেহে যে সকল নতুন
বৈশিষ্ট্যের আবির্ভাব ঘটে, যেগুলি বংশগতিতে সঞ্চারিত হয় এবং একই প্রজাতির একটি জীবকে অন্য জীবের থেকে পৃথক করে তোলে, সুেগলিকেই ভেদ বা প্রকরণ বলে। ডারউইনের মতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধারাবাহিক পরিবর্তন বা
ভেদই ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির উদ্ভব ঘটায়।
25. যোগ্যতমের উদ্বর্তন বলতে কী বোঝো?
[MP '07, '09]
ANS. ডারউইনের মধ্যে ত্রিধারা জীবন সংগ্রামের পথে যে সব জীব সহায়ক বা অনুকূল অভিযোজনমূলক বৈশিষ্ট্য অর্জন করে, তারাই জীবন সংগ্রামে জয়ী হয় এবং বেঁচে থাকার অধিকারী হয়; অন্যরা কালক্রমে অবলুপ্ত হয়।
জীবন সংগ্রামে এই উত্তরণকে যোগ্যতমের উদ্বর্তন বলে।
26. প্রাকৃতিক নির্বাচন কাকে বলে?
ANS. ডারউইনের মতে, “যে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় অনুকূল ভেদ বা অভিযোজনমূলক ভেদ সম্বন্বিত জীবেরা প্রতিযোগিতায় অন্যদের থেকে অধিক সুযোগসুবিধা অর্জন করে, তাকে প্রাকৃতিক নির্বাচন (Natural Selection) বলে।”
27. মিউটেশন কাকে বলে? মিউটেশন তত্ত্বের প্রবক্তা কে?
ANS জিনের সজ্জাক্রমের আকস্মিক পরিবর্তনের ফলে বংশগতিতে
সঞ্চারণশীল নতুন বৈশিষ্ট্যের উদ্ভবের ঘটনাকে মিউটেশন বা পরিব্যক্তি বলে। মিউটেশন তত্ত্ব বা পরিব্যক্তিবাদ-এর প্রবক্তা হলেন হুগো দ্য ভিস (1901)।
28. নয়া ডারউইনবাদ কী?
ANS. ভাইসম্যান, দ্য-ভ্রিস, গোল্ডস্মিথ, হ্যালডেন প্রমুখ বিজ্ঞানীরা ডারউইনবাদকে নতুনভাবে বিশ্লেষণ করে এর পরিমার্জন ও পরিবর্ধন করে যে নতুন সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে তাকে নয়া ডারউইনবাদ বা আধুনিক সংশ্লেষণবাদ বলে।
29. জীবাশ্ম কী?
(MP, 2014)
ANS. ভূগর্ভে সুদীর্ঘকাল যাবৎ সংরক্ষিত অধুনালুপ্ত প্রাচীন সামগ্রিক জীবের বা জীবদেহাংশের প্রস্তরীভূত অবস্থা অথবা জীবের সম্পূর্ণ দেহ বা দেহাংশের ছাপ ও ছাঁচ অথবা প্রাকৃতিক উপায়ে সংরক্ষিত সম্পূর্ণ জীবদেহ বা দেহাংশকে জীবাশ্ম বা ফসিল বলে। যেমন— প্রত্নযুগের প্রাণীর পায়ের ছাপ, ছাঁচ, মূলের বৃদ্ধিজনিত গহ্বর ইত্যাদি। এই গুলিকে ট্রেসফসিল বলে।
30. জীবন্ত জীবাশ্ম কাকে বলে?
ANS. যেসব জীব সুদূর অতীতে উৎপত্তি লাভ করেও কোনোরকম পরিবর্তন ছাড়াই পৃথিবীতে বিরাজমান, অথচ তাদের সমসাময়িক ও সমগোত্রীয় জীব বহু পূর্বেই পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে, তাদের জীবন্ত জীবাশ্ম বা লিভিং-ফসিল বলে। যেমন— সিলাকান্থ (Coelacanth) নামক মাছ, পেরিপেটাস (Peripatus) নামক সন্ধিপদ, স্ফেনোডন (Sphenodon) নামক সরীসৃপ, হংসচঞ্জ (Platypus) নামক স্তন্যপায়ী, গিংগো বাইলোবা (Ginkgo biloba) নামক ব্যক্তবীজী উদ্ভিদ জীবন্ত জীবাশ্মের উদাহরণ।
31. জীবাশ্ম ও জীবন্ত জীবাশ্মের মধ্যে পার্থক্য কী?
ANS. জীবাশ্ম হল লুপ্ত জীবের প্রস্তরীভূত অবস্থা, যা সুদীর্ঘ কাল ধরে পাললিক শিলাস্তরে চাপা পড়েছিল। তাই জীবাশ্ম জড়বস্তু। জীবন্ত জীবাশ্ম হল যে সব জীবের পূর্বপুরুষেরা বিলুপ্ত হয়ে গেছে কিন্তু তাদের অস্তিত্ব আজও বর্তমান। তাই এরা জীবন্ত জীব।
32. সংযোগরক্ষাকারী প্রাণী কাদের বলে?
ANS. জীবজগতে এমন কিছু জীব আছে যারা দুটি ভিন্ন জীবগোষ্ঠীর (দুটি পর্ব বা দুটি শ্রেণি) মধ্যে সংযোগ রক্ষা করে। অর্থাৎ এদের মধ্যে দুটি জীবগোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য বর্তমান। এইসব জীবদের সংযোগরক্ষাকারী জীব বা অন্তর্বর্তী জীব বলে। যেমন—
নিটাম- ব্যক্তবীজী ও গুপ্তবীজী উদ্ভিদের সংযোগী জীব।
পেরিপেটাস – অঙ্গুরিমাল ও সন্ধিপদ,
প্লাটিপাস – সরীসৃপ ও স্তন্যপায়ী
প্রাণীদের মধ্য সংযোগরক্ষাকারী জীব।
33. পাখির ডানা ও পতঙ্গের ডানাকে সমবৃত্তীয় অঙ্গ বলে কেন?
ANS.
(i) অঙ্গ দুটির উৎপত্তি ভিন্ন, অর্থাৎ, পাখির ডানা দেহকাণ্ডের অগ্রভাগের পার্শ্বদেশ থেকে এবং পতঙ্গের ডানা দেহের ১ম ও ২য়
বক্ষখণ্ডকের পৃষ্ঠদেশ থেকে উৎপন্ন হয়েছে।
(ii) অঙ্গ দুটির গঠন ভিন্ন, অর্থাৎ পাখির ডানা বিভিন্ন অস্থি ও পেশি সহযোগে এবং পতঙ্গের ডানা কাইটিন নামক উপাদান দিয়ে গঠিত।
(iii) দুটি অঙ্গেরই কাজ এক অর্থাৎ উড্ডয়নে সাহায্য করা।
34. নিষ্ক্রিয় অঙ্গ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
ANS. যে সকল অঙ্গ কোনো একটি জীবদেহে সুগঠিত ও সক্রিয়, কিন্তু ওই একই অঙ্গ অন্য কোনো জীবদেহে কর্মক্ষমহীন বা নিষ্ক্রিয় ও লুপ্তপ্রায় অঙ্গরূপে বর্তমান, সেইসব অঙ্গকে নিষ্ক্রিয় অঙ্গ বা ভেস্টিজিয়াল অরগ্যান
বলে। যেমন—কক্সিস, অ্যাপেনডিক্স ইত্যাদি।
35. প্রাণী ও উদ্ভিদের নিষ্ক্রিয় অঙ্গের উদাহরণ দাও।
ANS. প্রাণীর নিষ্ক্রিয় অঙ্গ :
(i) গিনিপিগের সক্রিয় সিকাম মানুষের
দেহে নিষ্ক্রিয় অঙ্গ ভার্মিফর্ম অ্যাপেনডিক্স-এ পরিণত হয়েছে।
(ii) বানরের কশেরুকা দ্বারা গঠিত সক্রিয় লেজ মানবদেহে নিষ্ক্রিয় অঙ্গ কক্সিসে-এ রূপান্তরিত হয়েছে।
উদ্ভিদের নিষ্ক্রিয় অঙ্গ :
(i) আম, কাজুবাদাম, কালকাসুন্দা, প্রভৃতি উদ্ভিদের বন্ধ্যা পুংকেশর বা স্ট্যামিনোড,
(ii) শতমূলি উদ্ভিদের বন্ধ্যা গর্ভকেশর বা পিস্টিলোড।
36. মৎস্য, উভচর, সরীসৃপ এবং পক্ষী ও স্তন্যপায়ী প্রাণীদের হৃৎপিণ্ডের গঠনগত পার্থক্য কী?
ANS.
(i) মৎস্যদের হৃৎপিণ্ড একটি অলিন্দ ও একটি নিলয় নিয়ে গঠিত,
(ii) উভচরদের হৃৎপিণ্ড দুটি অলিন্দ ও একটি নিলয় নিয়ে,
(iii) সরীসৃপদের হৃৎপিণ্ড দুটি অলিন্দ ও একটি অর্ধবিভক্ত নিলয় নিয়ে গঠিত (ব্যতিক্রম—
কুমিরের হৃৎপিণ্ড দুটি অলিন্দ ও দুটি নিলয় নিয়ে গঠিত),
(iv) পক্ষী ও স্তন্যপায়ীদের হৃৎপিণ্ড দুটি অলিন্দ ও দুটি নিলয় নিয়ে গঠিত।
37. মৎস্য, উভচর, সরীসৃপ, পক্ষী ও স্তন্যপায়ীদের হৃৎপিণ্ডের মধ্যে আচরণগত মিল কোথায়?
ANS.
সকলক্ষেত্রেই হৃৎপিণ্ড
(i) রক্ত সংগ্রাহী প্রকোষ্ঠ অলিন্দ এবং রক্তপ্রেরক
প্রকোষ্ঠ নিলয় সহযোগে গঠিত।
(ii) হৃদপেশি দ্বারা গঠিত।
(ii) হৃৎপিণ্ড পাম্প যন্ত্রের মতো কাজ করে রক্ত সংবহনের কাজে নিযুক্ত থাকে।
38. মেরুদণ্ডী প্রাণীদের ভ্রূণে প্রাথমিক অবস্থায় কী কী সাদৃশ্য দেখা যায়?
ANS. সাদৃশ্যগুলি হল—
(i) গলবিল অঞ্চলে বহিঃস্থ ফুলকা খাঁজ,
(ii) একসারি অন্তঃস্থ যুগ্ম ফুলকা থলি,
(iii) লেজ সদৃশ গঠনের উপস্থিতি।
39. সরীসৃপ ও পক্ষীর মধ্য সংযোগী প্রাণী আর্কিওপটেরিক্স-এর মধ্যে সরীসৃপ ও পক্ষীর বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
ANS. সরীসৃপের বৈশিষ্ট্য :
(i) চোয়ালে দাঁতের উপস্থিতি,
(ii) স্টারনাম কীল অস্থিবিহীন,
(iii) পাগুলি সরীসৃপের মতো,
(iv) পুচ্ছে 20-22টি কশেরুকা উপস্থিত,
(v) অগ্রপদে (ডানায়) নখর যুক্ত আঙুল ছিল, (vi) উদরে সরীসৃপের মতো উদর পঞ্জরাস্থি ছিল।
পক্ষীর বৈশিষ্ট্য :
(i) আকৃতি পাখির মতো,
(ii) চঞ উপস্থিত,
(iii) পুচ্ছে পালক উপস্থিত,
(iv) অগ্রপদ ডানায় রূপান্তরিত,
(v) দেহ পালকাবৃত।
40. মোল্ড বা ছাঁচ কী ?
ANS. পাথরের মধ্যে জীবদেহ আটকা পড়ার পর জীবদেহ পচনে নষ্ট হলে পাথরের মধ্যে যে ফাঁকা জীবছাপ তৈরি হয় তাকে মোল্ড বলে ।
41. ভেনাস হৃৎপিণ্ড কাকে বলে? কাদের এরূপ হৃৎপিণ্ড দেখা যায় ?
ANS. যে হৃৎপিণ্ডের মাধ্যমে কেবল মাত্র স্বল্প অক্সিজেন সমৃদ্ধ (deoxyg-neted) রক্ত বা কার্বন ডাইঅক্সাইড সমৃদ্ধ রক্ত প্রবাহিত হয়, তাকে ভেনাস হৃৎপিণ্ড বা শিরা হৃৎপিণ্ড বলে। মাছেদের এরূপ হৃৎপিণ্ড দেখা যায়।
42. পার্থক্য লেখো :
অপসারী বিবর্তন ও অভিসারী বিবর্তন।
43. ল্যামার্কের মতবাদের বিপক্ষে দুটি উদাহরণ দাও।
ANS.
i) অঙ্গের ব্যবহার ও অব্যহারের সূত্র :
পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার উদ্দেশ্যে জীবদেহের কোনো কোনো অঙ্গের বেশিমাত্রায়
ব্যবহার ঘটে, আবার কোনো কোনো অঙ্গের ব্যবহার কমে যায়। ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে নির্দিষ্ট অঙ্গ বা অঙ্গগুলি সবল ও সুগঠিত হয়। অপরপক্ষে,
ক্রমাগত অব্যবহারের ফলে অব্যবহৃত অঙ্গগুলি দুর্বল ও ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং
কালক্রমে অবলুপ্ত হয়।
44. অস্তিত্বের জন্য জীবানসংগ্রাম কীভাবে ঘটে থাকে?
ANS.
অস্তিত্বের জন্য জীবন সংগ্রাম :
জীবের জ্যামিতিক ও গাণিতিক হারেসংখ্যাবৃদ্ধি ঘটায় এবং খাদ্য ও বাসস্থানসীমিত থাকায়জীবকে বেঁচে থাকার জন্য কঠিন প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে হয়, ডারউইন তাকে ‘অস্তিত্বের জন্য জীবন সংগ্রাম’ আখ্যা দিয়েছেন। জীবন সংগ্রাম চলে প্রধানত দু-ভাবে, যথা—
(i) অন্তঃপ্রজাতিক সংগ্রাম, অর্থাৎ নিজ প্রজাতিভুক্ত জীবদের মধ্যে সংগ্রাম এবং
(ii) আন্তঃপ্রজাতিক সংগ্রাম, অর্থাৎ বিভিন্ন প্রজাতিভুক্ত জীবদের মধ্যে সংগ্রাম। এছাড়া জীবদের খরা, বন্যা প্রভৃতি পরিবেশের সঙ্গে সংগ্রাম করতে হয়, একে প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে সংগ্রাম বলে।
45. ঘোড়ার পূর্বপুরুষ থেকে আধুনিক ঘোড়ার পর্যায়ক্রমিকভাবে নামগুলি লেখো।
ANS.
জীবাশ্মঘটিত প্রমাণ :
ঘোড়ার জীবাশ্মের ইতিহাস পর্যালোচনা
করলে আমরা যে তথ্য পাই তা হল— আধুনিক ঘোড়া ইকুয়াস (Eohippus)
তার পূর্বপুরুষ ইওসিন যুগের ইওহিপ্পাস (Eohippus) থেকে নিম্নলিখিতভাবে বিবর্তনের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে।
ইওহিপ্পাস → মেসোহিপ্পাস → মেরিচিপ্পাস → প্লায়োহিপ্পাস → ইকুয়াস
46. ঘোড়ার বিবর্তনে ঘোড়ার যে কোনো চারটি পরিবর্তন উল্লেখ করো।
ANS.
(a) দ্রুত গতির জন্য ধারাবাহিক দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি,
(b) পায়ের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি,
(c) পায়ের আঙুলের সংখ্যা হ্রাস,
(d) পায়ের তিন নম্বর আঙুলের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ বৃদ্ধি,
(e) শক্ত ভূমিতে দৌড়াবার জন্য শক্ত খুরের আবির্ভাব,
(f) পেষক ও পুরপেষক ক্রাউনের আয়তন বৃদ্ধি।
আরো পড়ুন.........CLICK HERE
Post a Comment